দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধারণে দফায় দফায় বৈঠক করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৈঠকগুলোতে নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা, বৈধ অস্ত্র ব্যবহার ও প্রদর্শনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর অংশ হিসাবে ৩০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি।
এ ছাড়া ১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দুটো বৈঠকই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে হবে। এদিকে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এসব বৈঠক হবে। এগুলো রুটিন বৈঠক।’
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন মনে করছে কমিশন। নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরুর পর থেকে যাতে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাই কমিশন আগেভাগেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তফশিল ঘোষণার পরও পরিস্থিতি অনুযায়ী আবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে কমিশন।
তারা আরও জানান, এবার নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশের মাঠপর্যায়ের প্রত্যেক স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কমিশন; যা আগে কখনও হয়নি। তফশিল ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ সাধারণত প্রশাসন ও পুলিশের হাতেই থাকে।
১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন। নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফশিল ঘোষণা এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দফায় দফায় বৈঠক : ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং কোস্টগার্ডের মহাপরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবির প্রধানকেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১ নভেম্বর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এসব মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের নির্বাচনি কাজে সম্পৃক্ত করা, নির্বাচনে আচরণ বিধিমালা রক্ষায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে এই বৈঠকে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক আমন্ত্রণ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোববার উন্মুক্ত চিঠিতে এ আমন্ত্রণ জানান ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এতে তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। আপনারা জানেন যে, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার জন্য ভোট পর্যবেক্ষণে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা চাই, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমও পর্যবেক্ষণ করুক। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম নীতিমালা-২০২৩ মেনে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ইসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম বলেন, ইসির আমন্ত্রণপত্রের বিষয়ে সব দূতাবাস ও মিশনকে জানাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাতীয়