বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা নিয়ে বিরোধ বেধেছে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে। সমাবেশ সফলে বুধবার হওয়া সভায় নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যাতে জনসভা মঞ্চে উঠতে না পারেন, এ দাবি তোলে এক পক্ষ।
মঞ্চ তৈরি নিয়েও দেখা দেয় বিরোধ। বর্তমান মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও সাবেক মেয়র সাদিক অনুসারী দুপক্ষই বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যায় মঞ্চ তৈরির আয়োজন করতে। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দেয় তাদের। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঞ্চ তৈরির লড়াইয়ে মেয়র খোকন গ্রুপ জয়ী হলেও সাদিক-জাহাঙ্গীর মঞ্চে উঠতে পারবে কি না, তা রয়ে গেছে অমীমাংসিত।
নির্বাচনি জনসভায় অংশ নিতে ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে আসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যার অংশ হিসাবে বুধবার স্থানীয় সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয় সমন্বয় সভা। এতে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি জাহিদ ফারুক শামিম এবং সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
আলোচনার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে জাহাঙ্গীর-সাদিকের থাকার ব্যাপারে আপত্তি জানান মেয়র খোকন ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ। সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা, জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে সাদিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এবং প্রকাশ্য জনসভায় জাহাঙ্গীর দলবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে ওই আপত্তি জানান তারা।
মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী নগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী বলেছিলেন ডামি প্রার্থী দেওয়ার কথা। সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহ নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এছাড়া প্রকাশ্য জনসভায় কেবল নৌকার বিরুদ্ধে নয়, দল সম্পর্কেও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর।
এ ব্যাপারে সাদিক অনুসারী একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মঞ্চে থাকতে পারবেন না বলার ধৃষ্টতা তারা কোথায় পান? এছাড়া মঞ্চে কারা থাকবেন, তা নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্তরা রয়েছেন। দেখা যাক আমরা মঞ্চে থাকতে পারি কি না।
মঞ্চ ও এর আশপাশের আয়োজন নিয়ে বৃহস্পতিবার নগর ভবনে বৈঠক করেন মেয়র খোকন। সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন সেখানে। জনসভার সম্ভাব্য স্থান বঙ্গবন্ধু উদ্যানে থাকা স্থায়ী মঞ্চ সংস্কার, ভেতরে থাকা সড়ক সংস্কারসহ আরও বেশকিছু সিদ্ধান্ত দেন খোকন সেরনিয়াবাত। এরপর নগর ভবনের কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যায় সরেজমিন পরিদর্শনে।
সেখানে তখন অবস্থান করছিলেন নগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলসহ সাদিক অনুসারী নেতারা। মঞ্চ নির্মাণের আয়োজন করতে সেখানে গিয়েছেন বলে জানান তারা। এরই মধ্যে উপস্থিত হন বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান ও বিসিসি কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবসহ মেয়র খোকন অনুসারীরা। দুপক্ষের এই উপস্থিতির মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিমসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যান সেখানে। পরে উদ্যান ত্যাগ করে দুই পক্ষ।
মঞ্চ তৈরি নিয়ে নিরব হোসেন বলেন, জেলা নেতাদের নির্দেশে সমাবেশস্থলের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশ কোথায় হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া জানতে পারি, মঞ্চ ও সমাবেশস্থল প্রস্তুতের দায়িত্ব নিয়েছেন সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান বলেন, মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলাম। টুটুলরাও গিয়েছিলেন। সমাবেশস্থলের সব আয়োজনের দায়িত্ব মেয়রের শুনে চলে গেছেন।
বিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম বলেন, নিরাপত্তা পরিকল্পনার নানা দিক দেখতে গিয়েছিলাম সেখানে। আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী তখন মাঠে ছিলেন। তবে কোনো উত্তেজনা বা জটিলতা ছিল না। তাদের জানাই সমাবেশ কোথায় হবে এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স আসতে হবে। আমাদের কথা শুনে তারা উদ্যান থেকে চলে যান।
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মেয়র খোকন অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা লস্কর নূরুল হক বলেন, ২০১৮ সালে সর্বশেষ বরিশালে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৫ বছর পর তিনি আবার আসছেন বরিশালে। তার এ সফর স্মরণীয় করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জনসভায় ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট আমাদের।
বরিশাল