নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভায় ভাতিজা আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাচার কয়েক কোটি টাকার জমি দখল করা অভিযোগ উঠেছে। দখলের পর সেখানে থাকা চাচাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে পাকা বিপণিবিতান নির্মাণ করছে। এই ঘটনায় পুলিশ কাজ বন্ধের পরিবর্তে নির্মাণে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চরফ্যাশন বাজারের মধ্যে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাতিজা মো. মেহেদী হাসান রাজিব চরফ্যাশন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জিন্নাগড় মৌজায় (ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে) পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। যা চরফ্যাশন বাজারের মধ্যখানে অবস্থিত। এখানে জমির মূল্য ১৪-১৫ লাখ টাকা শতাংশ। নির্মাণাধীন ভবনে জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ।
জানা গেছে- ৩ হাজার ১১ বর্গফুটের পুরো জমিজুড়ে এ ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে। ওই স্থানে মেহেদীর চাচাদের পুরাতন পাঁচটি আধাপাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। সেই ঘরগুলো ভেঙে একস্থানে ইট জমা করে রেখেছে। সেই ইট ভেঙে খোয়া (কনা) করে জমা করা হচ্ছে। একই সাথে ভবনে বালি ফেলা, ফ্লর ও পিলার নির্মাণ হচ্ছে। ওই স্থানে ছবি তুলতে গিয়ে একাধিক বহিরাগত যুবককে দেখা যায়। যারা শ্রমিকদের সরে যেতে বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার। মূলত তাঁদের উপস্থিতিতে বিপণিবিতান নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মেহেদী। গত ৪ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাপত্রে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম বাদী আমিরুল ইসলাম (মেহেদীর চাচা), বিবাদী মো. মেহেদী হাসান রাজিবকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, মহজর পক্ষ ও তরপছানি পক্ষকে পরবর্তী নির্দেশ অথবা নিষেধাজ্ঞার শুনানী না হওয়া পর্যন্ত নালিশ-বিরোধীও সম্পত্তিতে স্থিতিবস্থার আদেশ বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। দু’পক্ষের কাগজপত্র দেখে জানা যায়, ক্রয়সূত্রে মরহুম মৌলভী আবুল হোসেম মাস্টার জিন্নাগড় মৌজার (এসএ খতিয়ান নং-৪৮০, দাগ নং ১২৮০, ১২৮৩) ২একর ৫১ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে ওই জমির মালিক হন স্ত্রী, বাবা-মা, ৬ পুত্র ও ১১মেয়ে। এর কিছু দিন পরে ৬ভাইয়ের একভাই মারা যায়। পাঁচ ভাই মোট জমি পায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। কিন্তু ছোট ভাই মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রাজিব একাই ৭৩ শতাংশ দাবি করছেন। এ নিয়েই মামলা চলমান। আদালতের স্থিতিতাদেশ মানছে না।
ভাতিজা মেহেদী হাসান রাজিব বলেন, তিনি এবং তাঁর বাবা ওয়ারিশদের নিকট কিছু জমি কিনে নেওয়ার পরে ৭৩ শতাংশের মালিক হয়েছে। সে বাড়তি কোনো জমির দখলে নেই। আদালত যে জমির ওপর স্থিতিতাদেশ (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছেন, নির্মাণাধীন ভবন সে জমির ওপর নয়।
তবে পরিবারের ৪ নম্বর ভাই মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ওয়ারিশদের জমির ওপর তাঁদের ভাইদের হক। ভাতিজার কোনো হক নেই। এ কারণে ভাইয়েরা ওয়ারিশদের জমি ক্রয়ের জন্য আদালতে টাকা জমা দিয়েছেন। ওই জমির পরিমাণ প্রায় ৬০শতাংশ। আদালতে মিমাংসা না দিতেই এবং অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরেও মেহেদী হাসান চাচাদের দখলে থাকা ঘর ভেঙে দখল নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে। ওয়ারিশরা জমি পাবে সকল দাগে। কিন্তু মেহেদী হাসান, সড়কের পাশে, বাজারের মধ্যের জমি দখল করেছে।
আমিনুল ইসলাম ও তাঁর ভাইয়েরা জানান, আদালতের মিমাংসা না আসার আগেই মেহেদী সরিকদের নিকট থেকে কেনা জমির ১০শতাংশ জমি উপজেলার আওয়ামী লীগের একনেতার কাছে বিক্রি করেছে। এ কারণে সকলে মেহেদীর অন্যায়কে পুলিশ সমর্থন করছে।
চরফ্যাশন পৌর সভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার হোসেন সামু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই ভাতিজা মেহেদী হাসান রাজিব ভবন নির্মাণ করছেন। পৌরসভার মেয়রসহ তাঁদের বিবাদমান সমস্যাটি মিমাংসা করতে বসেছিলেন। কিন্তু এই রাজীবের কারণে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তাঁরা আদালতের স্মরণাপণ্ন হয়েছেন।
চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিয়া বলেন, ওই জমিতে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আছে সত্য। কিন্তু স্থানীয় থানা পুলিশের প্রতি কোনো নির্দেশ নেই। বিষয়টি তিনি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন। এখানে তিনি কাউকেই সহায়তা করেননি। বরং অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, দাবি করেন ওসি।