নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: গল্প, উপন্যাসে সতিন মানেই ঝগড়াটে বা খল চরিত্র। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন এক সতিন। নির্বাচনে জয় পেতে ওই সতিনের সঙ্গে দিনরাত মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন তার অপর দুই সতিন। বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী ওই নারীর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় তিন সতিনকে একসঙ্গে দেখে ভীড় জমাচ্ছেন উৎসুক ভোটাররা।
পৌরসভাটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাজেদা বেগম। তাকে জেতাতেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার দুই সতিন মিনু বেগম, রেনু বেগম। সঙ্গে আছেন তাদের স্বামী আব্দুস সামাদও। মিনু ও রেনু ছাড়াও মাজেদা বেগমের আরেকজন সতিন আছে। তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করায় তার প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে সতিন মাজেদা বেগমের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
কয়েকজন ভোটার বলেছেন, বর্তমান সময়ে যখন সতিনদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত হয় না, তখন এক সতিনের জয়ের জন্য আরও দুই সতিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোট চাচ্ছেন। এটি বিরল ঘটনা।
ওই এলাকার ভোটাররা জানিয়েছেন, মাজেদা বেগম ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন ভোরে তারা তিন সতিন স্বামী আব্দুস সামাদকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। জয়ের আশায় গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট চাইছেন।
বন্তেঘরী গ্রামের ভোটার ফজলুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘সতিন মানেই যে খারাপ কিছু নয় তা আব্দুস সামাদের স্ত্রীরা প্রমাণ করেছেন। তাদের এই তিন সতিনের প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে আলাদা একটা উৎসাহ নিয়ে এসেছে। মাজেদা বেগম এখন এ পৌরসভার আলোচিত প্রার্থী।’
মাজেদা বেগমের সতিন মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা হাঁড়ি। কিন্তু সবাই আপন বোনের মতো। শুধু ভোট নয়, সকল সুখে-দুঃখে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াই।’
কাউন্সিলর প্রার্থী মাজেদা বেগম বলেন, ‘সতিন মানেই মনে করা হয় শত্রু। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান। সতিনরা আমার কাছে বোনের মতন। অতি আপনজন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখব।’
মাজেদা বেগমের স্বামী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘স্ত্রীদের নিয়ে আমি খুশি। তারা সব সমস্যাকে একসঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। আর তাদের এই মধুর সম্পর্কের কথা ভোটারেরা জানতে পেরে সকলেই অনেক খুশি।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুস সামাদের চার স্ত্রীর। এর মধ্যে বড় স্ত্রী সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এতে তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। মাজেদা বেগম বর্তমানেও ওই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। গতবারেও একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে তারা ভোটারদের মন জয় করেছিলেন।
এ ওয়ার্ডে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও দুই জন রয়েছে। ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৪৯৫ জন। তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি এই পৌরসভার ভোট গ্রহণ হবে।