একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। সেক্ষত্রে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থাৎ রোজার আগেই নির্বাচন হলে ভাল হবে বলে তারা মতামত জানিয়েছেন। তাদের মতামতের প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার করা হবে বলে জানিয়েছেন। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সন্ধ্যার পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের একটা সুর্নিদিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কোনোভাবেই তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না এবং তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আর বাড়াতে চান না। এপ্রিলের পর নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি এতদিন যা করেছি তা সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে; যদি না সবাই আমার সঙ্গে একমত হন – এরকম ধারণা প্রধান উপদেষ্টার ছিল। তখন আমরা তাকে বুঝিয়েছি যে, আপনার বেশি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে হবে, কথা বলতে হবে, মতবিনিময় করতে হবে। আপনি কেমন করে নির্বাচন করতে চান তা সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন। মান্না বলেন, আপনার সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে কোনটা সংস্কার করলেই না হয়, সে ক্ষেত্রে যদি সময়ক্ষেপণ হয় নির্বাচন বিলম্ব হবে। তবে নির্বাচন এপ্রিলের পর কোনোভাবেই আর গড়াবে না বলে উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন। সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মান্না বলেন, আমরা সংস্কারের বিষয়ে কিছু বলছি না, আমরা শুধু চাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সংস্কার অর্থবহ করতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আর জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের একমাত্র পথ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেটুকু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে জনগণের মধ্যে বিরূপ মনোভাব রয়েছে। তাই এরশাদের পতনের পরে যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি তৈরি করেছিল, সেভাবে বর্তমানেও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি আচরণবিধি করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং রাজনীতির গতিধারা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন তারা। তিনি বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। দেশের ভেতরে-বাইরে হওয়া নানা ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সেটা রোজার আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হলে ভাল হয়।
আমার বাংলাদেশের পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, প্রশাসনে তার নিয়ন্ত্রণে আসলেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কেন পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কায় ছিলেন। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা ও বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব কমানোর কথা। সেই সঙ্গে সংস্কার ও নির্বাচনের কথা বলে এসেছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নানা জায়গায় অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। যা কিনা একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ অনাস্থা এবং দূরত্বের জায়গাটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর আলাপ-আলোচনা দরকার।
দুই দফায় মোট ২০টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক হয়েছে। প্রথম দফায় বৈঠকে কয়েকটি বামপন্থি দলসহ ১১টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ ((বীর বিক্রম), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সাবেক আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেন বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজির উপস্থিত ছিলেন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছেন।
জাতীয়