নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে পাওনা টাকা চাওয়ায় গরম পানি ঢেলে ফারুক হাওলাদার নামের এক ব্যবসায়ীর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আহত ফারুক হাওলাদারের ছেলে মোঃ প্রিন্স হাওলাদার বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানা একটি মামলা দায়ের করেছেন (যার নং- ৪১/১১১)। তবে মামলা করার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশি কোন তৎপরতা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে ভূক্তভোগী পরিবার।
গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টার দিকে সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের পশুরীকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভূক্তভোগী ফারুক হাওলাদার চরহোগলা গ্রামের মৃত মোজাফফর হাওলাদারের ছেলে।
মামলার আসামীরা হলেন- পশুরীকাঠি গ্রামের মৃত ইছাহাক সিকদারের ছেলে মোঃ মাহাবুব সিকদার (৫০), তার বড় ভাই এনায়েত সিকদার (৬০) ও গিলাতলী গ্রামের মৃত হাসেম আলীর ছেলে মোঃ হাফিজুল ইসলাম (৩৫) সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন। মাহবুব সিকদার বরিশাল সদর আসনের এমপি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী। বিগত দিনে তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে হাট-ঘাট দখল করেছিলেন। এমনকি কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে একাধিক দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে- মোঃ ফারুক হাওলাদার সেন্টারিংয়ের মালামাল বিভিন্ন স্থানে ভাড়া দেয়। বিগত ৪ মাস আগে তার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মাহাবুব সিকদার সেন্টারিংয়ের মালামাল ভাড়ায় নেয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মাহাবুব সিকদার ফারুক হাওলাদারের সেন্টারিংয়ের মালামাল ফেরৎ দেয়নি এবং সঠিকভাবে টাকা পয়সা দেয়নি। ফারুক হাওলাদার সেন্টারিংয়ের মালামাল ও ভাড়ার টাকা চাইলে মাহাবুব সিকদার তার সাথে খারাপ আচরণ করে ও বিভিন্ন হুমকি দেন। পরবর্তীতে ফারুক হাওলাদার তার সেন্টারিংয়ের মালামাল খুলে আনতে গেলে মাহাবুব সিকদার বাধা দিয়ে তাকে তারিয়ে দেন। এ নিয়ে মামলার আসামীদের সাথে ফারুক হাওলাদারের বেলতলা খেয়াঘাটে বসে ঝগড়া হয়। কিছুক্ষন পর ফারুক হাওলাদার সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টার দিকে চরমোনাই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডস্থ পশুরীকাঠির বেলতলা খেয়াঘাটে সজলের চায়ের দোকানের সামনে পৌছালে মাহাবুব সিকদারের নেতৃত্বে তার বড় এনায়েত সিকদার ও মোঃ হাফিজুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা তার পথরোধ করে এলোপাথারী মারধর শুরু করে। এ সময় মাহাবুব সিকদার হত্যার উদ্দেশ্যে সজলের চায়ের দোকানে থাকা চা বানানোর ফুটন্ত গরম পানির কেতলী ফারুক হাওলাদারের বুকে ও পেটের উপর ছুড়ে মারে। এতে ফারুক হাওলাদারের বুকে, পেটে, ডান হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লেগে জ্বলসে যায়। তখন মোঃ হাফিজুল ইসলাম হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা ইট দিয়ে ফারুক হাওলাদারের মাথায় আঘাত করে। ইটের আঘাত তার ঘারের পিছনে লেগে জখম হয়। এ সময় এনায়েত সিকদারসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা তাকে এলোপাথারী কিল ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এ সময় তারা ফারুক হাওলাদারের কাছে থাকা নগদ ২১ হাজার ৭২০ টাকা নিয়া যায় এবং খুন জখমের হুমকি প্রদান করে। এ সময় ফারুক হাওলাদারের ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে রক্ষ করে। পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ফারুক হাওলাদার বলেন- ৪ মাস আগে তার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মাহাবুব সিকদার সেন্টারিংয়ের মালামাল ভাড়ায় নেয়। এখন পর্যন্ত সেন্টারিংয়ের মালামাল ফেরৎ দেয়নি এবং সঠিকভাবে টাকা পয়সা দেয়নি। সেন্টারিংয়ের মালামাল ও ভাড়ার টাকা চাইলে মাহাবুব সিকদারের নেতৃত্বে তার বড় এনায়েত সিকদার ও মোঃ হাফিজুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা মারধর শুরু করে। এ সময় মাহাবুব সিকদার হত্যার উদ্দেশ্যে সজলের চায়ের দোকানে থাকা চা বানানোর ফুটন্ত গরম পানির কেতলী আমার বুকে ও পেটের উপর ছুড়ে মারলে বুকে, পেটে, ডান হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লেগে জ্বলসে যায়। এ সময় মোঃ হাফিজুল ইসলাম তার হাতে থাকা ইট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে এনায়েত সিকদারসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা তাকে এলোপাথারী কিল ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। আমি এর বিচার চাই।
ফারুক হাওলাদারের ছেলে মোঃ প্রিন্স হাওলাদার বলেন- ৬ দিন আগে মামলা করেছি। এখন পর্যন্ত পুলিশের কোন তৎপরতা দেখিনি। আমরা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গৌতম বলেন- আমি নতুন এসেছি, সবাইকে ঠিকভাবে চিনিনা। ইদানিং খুব চাপ যাচ্ছে অপারেশন ডেভিল হান্টের জন্য। দ্রুত অপরাধিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন- এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। শীঘ্রই অপরাধিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
লিড নিউজ বরিশাল