দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটছে না। এজন্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের অদক্ষতাও অনেকাংশে দায়ী। চিকিত্সা শিক্ষা ও সেবার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। ব্যক্তির পকেটের খরচ কমাতে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণের (নাবিক)’ আয়োজনে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) আলোকে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এটি ছাড়া নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একদম তলানিতে রয়েছে। গত বছর স্বাস্থ্যে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল। আগেরবারও এমন ছিল। ২০২২-২৩ এ প্রস্তাব ছিল ৩৬ হাজার কোটির বেশি, ষান্মাসিক পর্যালোচনার সময় কমিয়ে ২৯ হাজার ৭০০ কোটি করা হয়। এ বছর ব্যয় হয় ২২ হাজার ৬০০ কোটির মতো। আমাদের বুঝতে হবে এটি কেন ব্যয় করতে পারছি না। পুরোটা ব্যয় করা গেলে তিনগুণ বেশি কাজ করা যাবে। কিন্তু দুর্নীতির কারণে সম্ভব হয়নি। আরেকটি হচ্ছে সব চিকিত্সকের সমানভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত না করা।
নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। এক সময় মানুষ টিকা নিতো না। এখন সে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে ইপিআই কর্মসূচি সফল হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবি্লউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদষ্টো ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানোন্নয়ন হচ্ছে না, তার কারণ স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি। আরেকটি হলো অপচয়, যেখানে যা ব্যয় হওয়ার কথা সেখানে হচ্ছে না। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের অদক্ষতাও একটি কারণ। তিনি পাঠ্যক্রমে স্বাস্থ্যশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
শিশুবান্ধব বাজেট সেশনে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের উপদষ্টো জাফর সাদিক বলেন, জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা উচিত। আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, অর্থনীতিবিদ ড. ওমর ফারুক, শিশু সংগঠক জাকারিয়া হাবিব পাইলট।
এ সেশনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, আসলাম বেগ সায়েম, উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ ও তাহমিনা রহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে প্যানেলিস্ট হিসেবে আরও বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. এনামুল হক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের উপদষ্টো রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুর মোরশেদ, পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) আবু জামিল ফয়সাল। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক, সারাদেশ