মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম ফোরকানুল ইসলাম (৬০)। চকরিয়ায় ইউএনও, সিভিল সার্জন ও ওসির গাড়িতে হামলার সময় তিনি নিহত হন। রাজধানীর শাহবাগ এবং বায়তুল মোকাররমে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। চট্টগ্রামে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানের চেষ্টা করলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এদিন দুপুরে পিরোজপুর জেলা শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি মসজিদের পাশে সাঈদীকে দাফন করা হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুর খবর শুনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা শাহবাগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ভোর ৫টার দিকে সাঈদীর লাশ পিরোজপুর নিয়ে যাওয়ার সময় আবার সংঘর্ষ হয়। কয়েক দফায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে সাঈদীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সামনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। পাংচার করে দেওয়া হয় চাকা। এ কারণে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলে দেয় পুলিশ।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ১০-১২ জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামায়াত তাদের চরিত্র বদলায়নি। হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ চালিয়ে দলটি তাদের পুরোনো রূপ প্রকাশ করে। এ কারণে ঢাকায় জানাজার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ আশপাশের কয়েকটি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কিছু সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আসর নামাজের পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ চত্বরে গায়েবানা জানাজা আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। এরপর কয়েক দফা ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়।
সিএমপি দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি জাহেদুল কবির বলেন, আটকের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি হবে।
চকরিয়া (কক্সবাজার), বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিরিঙ্গা পুরাতন জামে মসজিদ মাঠে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা হয়। এ কারণে এলাকায় পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবস্থান করেন। জানাজা শেষে যাওয়ার পথে জামায়াত-শিবিরের লোকজন ওসির গাড়ি, সিভিল সার্জনের গাড়ি ও ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় সংঘর্ষে ফোরকানুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফোরকান কার গুলিতে নিহত হয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, কার গুলিতে কে নিহত হয়েছে আমি জানি না। জানাজা শেষে ফেরার পথে উচ্ছৃঙ্খল জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ ও ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর করে। পেকুয়া উপজেলায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত পিরোজপুর জেলা শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সাঈদী ফাউন্ডেশন মসজিদে মঙ্গলবার দুপুরে দাফন করা হয়। এর আগে সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে জানাজা হয়। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। নামাজের আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মজিবর রহমান আগামী সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদীকে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সারাদেশ