নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র ও ডাকাতির সরঞ্জামাদিসহ ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের কুখ্যাত ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিম ও অন্যতম প্রধান সহযোগী সোহাগসহ ৮ ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। র্যাব-৮ ও র্যাব- ১০ এর যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রোববার (৩০ জুন) বিকেল ৪ টায় বরিশাল র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে র্যাবের সহকারী পরিচালক লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডাকাত দলের সর্দার মহেশপুরের মৃত ইউসুফ জমাদ্দারের ছেলে আব্দুল হাকিম (৪৮), বাকেরগঞ্জের মৃত সালাম চৌকিদারের ছেলে মিজান চৌকিদার (৪০), রাঙ্গাবালী উপজেলার নুরু মিয়া হাওলাদারের ছেলে মোঃ রহিম হাওলাদারকে (৪০), বাকেরগঞ্জের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে মোঃ শাওন ইসলাম সোহাগ (২৪), বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মোঃ রাজা খলিফা (২৫), বাকেরগঞ্জের মৃত সোবহান হাওলাদারের ছেলে মোঃ নাসির হাওলাদার (৪০), পটুয়াখালী সদরের মোঃ মান্নান হোসেনের ছেলে মোঃ কালাম হোসেন (৩৫) ও আমতলীর মৃত আলী হোসেন মাতব্বরের ছেলে মোঃ সেলিম মাতব্বর (৫০)।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন- গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে বরিশালের বাকেরগঞ্জের মধ্যম মহেশপুর এলাকায় একটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যগণ বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটার কয়েকটি এলাকায় পর্যায়ক্রমে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ডাকাত দলের সর্দারের বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে র্যাব-৮ ও র্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানিক দল ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিমের বাড়ির কাছে গেলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ডাকাত দলের সর্দার আব্দুল হাকিম, মিজান চৌকিদার ও মোঃ রহিম হাওলাদারকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়। বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
তিনি আরও জানান- পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে রাজধানীর দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পলাতক ডাকাত দলের অন্যতম প্রধান সহযোগী মোঃ শাওন ইসলাম সোহাগ, মোঃ রাজা খলিফা, মোঃ নাসির হাওলাদার, মোঃ কালাম হোসেন ও
মোঃ সেলিম মাতবরকে গ্রেফতার করা হয়। এ তাদের কাছ থেকে ১টি খেলনা পিস্তলসহ বিপুিল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনার তাদের সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্বীকার করে জানান- তারা আন্তঃজেলা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১০/১৫ জন। এদের মধ্যে আব্দুল হাকিম ডাকাত দলের সর্দার এবং গ্রেফতারকৃত শাওন ইসলাম সোহাগ তার অন্যতম প্রধান সহযোগী। গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাকিম ও সোহাগের নেতৃত্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা এবং মুন্সিগঞ্জ, মাদরীপুর, ঢাকা এলাকায় বাসা, অফিস, গ্যারেজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এই ডাকাত দলটি আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে বরিশালসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো। সোহাগের নেতৃত্বেও একটি দল বরিশালসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো।
এছাড়াও দুইটি ডাকাত দল মাঝে মধ্যে এক সাথে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাকিম ও সোহাগের নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় প্রথমে দলের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি, অফিস ও গ্যারেজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রেকি করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক টার্গেট নির্ধারণ করতো। পরবর্তীতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দলের কিছু সদস্য টার্গেটকৃত বাসা, অফিস ও গ্যারেজসহ অন্যান্য স্থাপনার বাহিরে পাহারা দিতো এবং অন্যান্য সদস্যরা সুড়ঙ্গো করে অথবা জানালার গ্রিল কেটে অথবা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করতো।
এ সময় দলের কিছু সদস্য সেখানে অবস্থানরত ব্যাক্তিদের অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রাখতো, নির্যাতন করতো এবং অন্য সদস্যরা নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ শেষে একত্রে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতো।
র্যাব জানায়- গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতির অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতো। এছাড়াও তারা বিভিন্ন মামলায় কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা অন্যান্য আন্তঃজেলা ডাকাতদের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং সেখানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতো।পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে রপ্তকৃত কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করতো বলে জানা যায়।
র্যাবের তথ্যমতে- গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাকিম একজন দুর্ধর্ষ পেশাদার ডাকাত। সে বিগত ২০ থেকে ২২ বছর যাবৎ ডাকাতি কার্যক্রমের সাথে জড়িত। সে অল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় নিজেই ১০-১৫ জনের আন্তঃজেলা একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। তার নির্দেশে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, জালিয়াতি ও ডাকাতি সংক্রান্তে ১০টি মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত সোহাগ পেশায় একজন গাড়ী চালক। সে এই ডাকাত দলের সর্দার আব্দুল হাকিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। এছাড়াও সে ডাকাত দলে যোগদানের পূর্বে অত্র অঞ্চলে বিভিন্ন দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত সর্দার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মারামারি ও ডাকাতি সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় তিনিও বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মিজান পেশায় একজন গাড়ির হেলপার ও রহিম একজন ব্যবসায়ী। তারা এই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা ওই ডাকাত দলের সর্দার আব্দুল হাকিমের মাধ্যমে ডাকাতি পেশায় জড়িত হন। তারা আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো। গ্রেফতারকৃত কামাল, রাজা, নাসির ও সেলিম এই ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য বলেও জানায় র্যাব।
বরিশাল, বরিশাল বিভাগ