বিসিসির ১৪ নং ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেংকারির অভিযোগ ॥ ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সেবা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দিলে সময়তো পাওয়া যায়না জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম-মৃত্যুসনদসহ কোন সেবা। সম্প্রতি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য নিবন্ধিত হতে আসা এক ব্যক্তির ঘুষের টাকা ফেরত নেয়াকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলামের ঘুষ কেলেংকারীর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই অসংখ্য মানুষ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ঘুষ গ্রহণের নানা অভিযোগ আনেন।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনে যখন থেকে কাউন্সিলরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছে তখন থেকেই পুরো কর্তৃত্ব চলে আসে ওয়ার্ড সচিবদের কাছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসেবার জন্য একজন করে সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হলেও তাদের নিজস্ব দাপ্তরিক কাজের চাপে জনগণের কাছাকাছি আসার সুযোগ পাননা। এমনকি তারা সরকারি নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় ওয়ার্ড কার্যালয়গুলোতে বসতেও পারেননা। ফলে ওয়ার্ড সচিবদের মাধ্যমেই জনগণকে তাদের কাংখিত সেবা নিতে হয়। আর এই সুযোগে দূর্ণীতিগ্রস্থ ও সেচ্ছাচারি হয়ে উঠছে অনেক ওয়ার্ড সচিব। টাকা ছাড়া কোন সেবাই দিতে চাননা তারা। টাকা না পেলে সেই কাজটি নিয়ে নানা তালবাহানা করে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে হয়রানি করেন সেবাগ্রহীতাদের। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন ওইসকল দূর্ণীতিগ্রস্থ ওয়ার্ড সচিবরা। এমনই একজন নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলাম। আওয়ামীলীগের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রভাবশালী কর্মচারী নজরুল ইসলাম এখন ১৪ নং ওয়ার্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বের শুরু থেকেই তার রুক্ষ আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ওয়ার্ডবাসী। তারপরও প্রথমদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকায় ভয় ও চাপের মুখে তার রূপ প্রকাশে সমর্থ হয়নি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর কাউন্সিলরদের তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির পর সচিব নজরুল ইসলমই হয়ে উঠেন একজন কাউন্সিলর। নিজের খেয়াল খুসি মত অফিসে আসা, জনগণের সাথে যেমন খুসি ব্যবহার করা, সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে ঘুরিয়ে হয়রানির মাধ্যমে টাকা আদায় করে কাজ সম্পন্ন করা তার নিত্যদিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কাজ না করে দেয়ার হুমকিও দেন তিনি। কথিত আছে ঘুষ না দিলে তার কাছ থেকে পাওয়া যায়না জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম-মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদসহ কোন সেবা। তিনি এই শহরের স্থানীয় দাবী করে বিভিন্ন লোককে হুমকি ধামকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরকমই এক অভিযোগে জানা যায়, ১৪ নং ওয়ার্ডস্থ কাজিপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা তার স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তির নিবন্ধনের জন্য প্রায় ৭/৮ মাস আগে ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলামের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। প্রায় তিন মাসেও নিবন্ধিত হতে না পেরে ওয়ার্ড কার্যালয় খবর নিতে গেলে তাকে জানানো হয় তার কাগজপত্র হারিয়ে গেছে। পুনরায় আবারও কাগজ জমা দিতে বলেন ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলাম। তবে এবার শুধু কাগজ নয় সাথে দাবী করেন ৫’শত টাকা। টাকা দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ওই ব্যক্তি টাকা ও কাগজ ওয়ার্ড সচিবের কাছে জমা দেন। তবে এ ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তার স্ত্রী মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য নিবন্ধিত হতে পারেননি। সম্প্রতি ওই ব্যক্তির সাথে এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলাম ঘুষের টাকাসহ তার কাগজপত্র ফেরত দিয়ে দেন। সেবা বঞ্চিত ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেন যাদের কাছ থেকে যত বেশি টাকা ঘুষ নেন এই ওয়ার্ড সচিব তার কাজটি তত দ্রুত করেন। এ ঘটনার পর আলোচনায় আসে ওয়ার্ড সচিব নজরুল ইসলামের ঘুষ বানিজ্যর খবর। রাজা নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে তার কাছ থেকেও টাকা নেন এই ওয়ার্ড সচিব।
আর টাকা না পেলে সেই ব্যক্তির সাথে করা হয় দূর্ব্যবহার। এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে বলে ভুক্তভুগিরা জানান। ১৪ নং ওয়ার্ডবাসীরা দূর্ণীতিগ্রস্থ এই ওয়ার্ড সচিবকে এখান থেকে প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন। নয়তবা যেকোন সময় ওয়ার্ডবাসীর সাথে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশংকা করছেন। যার দায়ভার কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে বলে দাবী করেন তারা।
ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী বরিশাল, বরিশাল বিভাগ