এম. জাহিদ ।। বরিশাল নগরীতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠেছে মরা গরু জবাই ও পচা মাংস বাজারজাতের ঘটনা। নগরীর চাঁদমরী এলাকায় মরা গরু জবাই করে পচা মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয় দুই কশাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই কাইয়ুম। জব্দকৃত মরা গরু ও পচা মাংস নিয়ে তিনি বরিশাল সদর ভূমি অফিসে যান। তবে সেখান থেকেই শুরু হয় একের পর এক রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ নাটকীয়তা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক সূত্র জানায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর চূড়ান্ত নির্দেশ আসার আগেই জব্দকৃত পচা গরুর মাংস একটি অটোরিকশায় তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পদ্মাবতী এলাকার বাসিন্দা ও মরাগরু জবাই চক্রের অন্যতম সদস্য সবুজের মাধ্যমে সেই পচা মাংস সরিয়ে নেওয়া হয়, যা সরাসরি আইন লঙ্ঘন এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বরিশাল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম বলেন,“আমি নিজে পচা গরুর মাংসের সততা পেয়েছি। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দকৃত মাংস পুলিশের উপস্থিতিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে মাটির নিচে পুঁতে বিনষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, তার নির্দেশের আগেই এএসআই কাইয়ুমের নির্দেশে অটো ড্রাইভার পচা মাংস নিয়ে চলে গেছে এই তথ্য শুনে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন এসিল্যান্ড। পরে পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানার পর তিনি ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ বাতিল করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
এদিকে ভূমি অফিসে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে এএসআই কাইয়ুম নৈশপ্রহরীকে গেট বন্ধ করে দিতে বলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। জব্দকৃত পচা মাংস কোথায় গেল?
এ বিষয়ে বরিশাল মডেল কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল-মামুন উল ইসলাম ফর্মাল নিউজকে বলেন ,এ টা অবৈধ ও নষ্ট জিনিস। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অবশ্যই এটি বিনষ্ট করতে হবে। এটা কাউকে দিয়ে দেওয়ার কথা না, আর কোনো অটোচালক একা এসব নিয়ে যেতে পারে না। আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি এবং এসআই কাইয়ুমকে ১৫ মিনিটের মধ্যে থানায় হাজির হতে বলেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, জরিমানার আদেশ ঘোষণার সময় এএসআই কাইয়ুম এসিল্যান্ডকে উদ্দেশ করে বলেন,স্যার, একটু সময় দেন টাকা ম্যানেজ করতে সময় লাগবে। দায়িত্বরত পুলিশের এমন বক্তব্য শুনে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে পড়েন।পরে এক সংবাদকর্মী পোশাক পরিহিত অবস্থায় এএসআই কাইয়ুমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন,
“না না, আমি না ওদিকে দেখেন, হয়তো অন্য কেউ আনছে।এই দায় এড়ানোর চেষ্টা, গরিমসি এবং পচা মাংস বহনকারী চক্রকে পালাতে সহায়তার ঘটনায় পুরো বিষয়টি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে।
নগরবাসীর মধ্যে এখন তীব্র আতঙ্ক এই পচা মাংস কি ইতোমধ্যেই বরিশালের কোনো বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মাংস মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে।
নগরবাসীর জোর দাবি। এই ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ জনস্বাস্থ্য নিয়ে এমন ভয়াবহ খেলায় মেতে উঠতে না পারে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়,পচা গরুর মাংস কার ইশারায়, কার স্বার্থে উধাও হলো? এমনিই প্রশ্ন রয়ে যায় নগরবাসীর ।
লিড নিউজ গণমাধ্যম, জাতীয়, বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, শিরোনাম, সারাদেশ, স্বাস্থ্য, হোম


