নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালের আলোচিত মাদক সম্রাট রাসেল হাওলাদার ওরফে রাসেল মেম্বরকে এবার ইয়াবার বড় একটি চালান এবং বেশকিছু ধারালো অস্ত্রসহ ধরতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়াস্থ রাসেলের বাড়িতে হানা দেন। এবং সেখানে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে স্থানীয় আট নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর রাসেলকে গ্রেপ্তার করেন।
পুলিশ জানায়, আলোচ্চ্য মাদক বিক্রেতা রাসেলের পুরো পরিবার মাদকবিক্রিতে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে তার স্ত্রী এতে বেশ পটু। মাদকসহ বিভিন্ন ঘটনাবলীতে তাদের বিরুদ্ধে অন্তত ১২টির বেশি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ তাকে বৃহস্পতিবার রাতে বড় একটি ইয়াবার চালানসহ গ্রেপ্তার করা হলো।
কাউনিয়া থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয় শতাধিক কিশোর-যুবকের সহযোগিতায় রাসেল চরবাড়িয়া ইউনিয়নের গাজীর খেয়াঘাট গুচ্ছগ্রাম এলাকাকে ‘ইয়াবার হাট’ বানিয়ে ফেলেছিল। একজন জনপ্রতিনিধির এমন অনৈতিক বাণিজ্যে স্থানীয় সচেতনমহল সংক্ষুব্ধ থাকলে রাসেলের প্রভাবের কারণে কেউ এতদিন মুখ খোলেনি। আবার কেউ কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখালেও রাসেলের হুমকি-ধামকি এবং ইজ্জত হারানোর ভয়ে সামনে অগ্রসর হয়নি। ফলে রাসেল সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পুরো চরবাড়িয়াতে মাদকের ডিলার খুলে বসে এবং এর বিষ কিশোর-যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ১ জুন রাসেলের সহযোগী শাওনকে তালতলী ব্রিজ এলাকা থেকে ২০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এবং সে স্বীকার করে এই ইয়াবা রাসেলের, সে শুধু বিক্রিতে সহযোগিতা করছে। পুলিশ ওই মামলায় শাওনের পাশাপাশি রাসেলকে অভিযুক্ত করে এবং গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ধুরন্ধর রাসেল আগাম এই খবর কোন এক মাধ্যম জানতে পেরে আত্মগোপনে নিরাপদ স্থান বেঁচে নেয়। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তোকে তোকে ছিল, কখন বাগে পাওয়া যায়। তবে মাঝে মধ্যে তার বাসায় কাউনিয়া থানা পুলিশ হানা দিতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুচ্ছগ্রাম এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সবাইকে ম্যানেজ করে সহযোগীদের দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে রাসেল মেম্বার। তার সহযোগী হয়ে কাজ করছেন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাওন ব্যাপারী, আলামিন মোল্লা, বাবু ওরফে ল্যাপটপ বাবু, রুবেল সরদার এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সালাম চৌকিদার, মামুন ফকির, সাইমুদ্দিন, হারেজ গাজী, আইয়ুব আলী ও সাইফুল সরদারসহ অর্ধশতাধিক যুবক। এ ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার জন্য মেম্বারের রয়েছে দুটি ট্রলার ও একটি পিকআপ। সহযোগীদের কেউ গ্রেপ্তার হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান রাসেল মেম্বার, পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে গোপনে এলাকায় ফেরেন। তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনা করেন স্ত্রী শিরিন বেগম। তাদের কাছে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান আসে।
কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, রাসেল মেম্বরকে ধরতে পুলিশ অনেকদিন আগে থেকেই তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু চতুর রাসেলকে বাগে পাওয়া না গেলেও সুবর্ণ একটি সুযোগ আসে বৃহস্পতিবার রাতে।
ওসি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই এনামুল হক, গবিন্দ সাহা, শামসুল আলম এবং এএসআই কামরুল ইসলামকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীর খেয়াঘাট এলাকায় রাসেলের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে আড়াই হাজারের বেশি ইয়াবা এবং অন্তত ৫টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাসেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং সকল প্রক্রিয়া শেষে তাকে আজ শুক্রবার আদালতে প্রেরণ করা হবে, জানান ওসি।
লিড নিউজ বরিশাল, বরিশাল বিভাগ, শিরোনাম