ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আবারও ইসরাইলি বোমাবর্ষণ। সেই সঙ্গে অবরোধ। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গোল্যান্ট গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি সব কিছুর সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এটি নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিনে ১৬ বছর ধরে অবরোধ বজায় রেখেছে ইসরাইল। বিষিয়ে তুলেছে জনজীবন। বিনাশের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় শিল্পগুলো। গাজা উপত্যকার দ্বিতীয় সর্বাধিক উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক মৎস্য শিল্পকেও ধ্বংস করার জন্য গাজার জেলেদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারী ও দমবন্ধ নীতি অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইল সোমবার গাজার প্রধান বাণিজ্যিক ক্রসিং কেরেম শালোম চার দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। গাজার জেলে ইউনিয়নরা বলছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ইতোমধ্যেই ২৬ টন মাছ পচে গেছে। তিন লাখ ডলার লোকসান হয়েছে। ইসরাইলি অবরোধে ঋনের ভারে ডুবছে গাজার জেলেরা।
১৯৯০-এর দশকে ইসরাইল এবং প্যালেস্টাইন লিবারেল অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি গাজার জেলেদের উপকূল থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ ধরার অনুমতি দেয়। কিন্তু ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের মাত্র ছয় নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যাত্রা করার অনুমতি দেয়। জেলেরা অনুমোদিত এলাকার মধ্যে মাছ ধরার চেষ্টা করলেও অনেক সময় আক্রমণ ও গুলির শিকার হয়। গাজার মৎস্যজীবী মাহমুদ আলসাইদি (৩১) বলেন, ‘২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ভোরবেলা, আমরা বাড়ি ফেরার জন্য মাছ ধরতে শুরু করি।
কোনো সতর্কতা ছাড়াই ইসরাইলি নৌবাহিনী আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। আমাদের আটকে রেখে মারধর করে।’ ইসরাইল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সমুদ্রে মাহমুদকে দ্বিতীয়বার আটক করে। তার নৌকা বাজেয়াপ্ত করে এবং তাকে চার বছরের জন্য কারারুদ্ধ করে। এখনো সমানতালেই চলছে তাদের সেই অত্যাচার। মাহমুদ এখন ঋণের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে নৌকা ও জীবিকাহীন। জেলে আবদেল রহমান আবু রিয়ালা (১৯) বলেন, ‘মাছ ধরার সুযোগের অভাবের কারণে তিন হাজারেরও বেশি ডলারের ঋণের বোঝায় পড়েছেন।’
২০০৭ সাল থেকে ইসরাইল গাজায় মাছ ধরার সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করেছে। মাছ ধরার জাল, জিপিএস ডিভাইস, নৌকার ইঞ্জিন এবং সবচেয়ে সহজ মাছ ধরার সরঞ্জামের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিষিদ্ধ করেছে। কঠোর বিধিনিষেধগুলো ইসরাইলি অবরোধের অংশ।
গাজার জেলে ইউনিয়নের প্রধান নিজার আয়াশ দ্য নিউ আরবকে বলেছেন, গাজা উপত্যকার ৯৫ শতাংশ জেলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। নিজার অনুমান করেছেন, ৭০ শতাংশেরও বেশি জেলে তাদের নৌকায় যান্ত্রিক বিপর্যয়, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ওপর ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা এবং মাছ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী বছরের মধ্যে কাজ বন্ধ করে দেবে। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধের ফলে গাজায় নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ২০০০ সাল থেকে ১০ হাজার থেকে চার হাজারে নেমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক