নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি এবারো পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্যের গত ৫ বছরে নিজের সম্পদের পরিমাণ কমলেও বেড়েছে ঋণের বোঝা।
বিএ, এলএলবি সনদধারী শামীম ওসমান তার আয়ের উৎস ব্যবসা হিসেবে প্রদর্শন করেছেন। বর্তমানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি; যা গতবার ছিল চারটি। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী ৫ বছর পূর্বে শামীম ওসমানের নামে ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল; যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৭ টাকায়। আর বন্ধু ও ব্যাংকের কাছে একক ও যৌথভাবে তিনি দেনা ও ঋণ আছেন ২২ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা। ৫ বছর আগে যা ছিল ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭ হাজার ৮১৭ টাকা।
ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, দাঙ্গা সংঘটনের অভিযোগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মোট ১৭টি মামলার তালিকা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। মামলাগুলোর মধ্যে তিনটিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, চারটি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকিগুলোতে তিনি খালাস ও অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
অপরদিকে ব্যবসা খাতে শামীম ওসমানের আয় বেড়েছে। গতবার ব্যবসা খাতে তার আয় ছিল ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা; যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা। তবে স্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকা এবারো অপরিবর্তিত রয়েছে।
শামীম ওসমান তার মালিকানাধীন পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহণ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেডএন করপোরেশন, শিপিং (পণ্য এবং জ্বালানি পরিবহণ) প্রতিষ্ঠান জেড এন শিপিং লাইন্স লিমিটেড, শিপিং (জ্বালানি পরিবহণ) প্রতিষ্ঠান মাইশা এন্টারপ্রাইজ, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেড এবং উইসডম নিটিং মিলস লিমিটেড।
শামীম ওসমান কৃষি খাতে তার কোনো আয় দেখাননি। যদিও তিনি হলফনামায় তার নামে সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চরহাজী গ্রামে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। বাড়ি বা দোকান ভাড়া বাবদ আয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন; যা ৫ বছর আগে ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬৪ টাকা। তার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ হিসেবে আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা; যা আগের নির্বাচনী বছরে ছিল ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮১ টাকা। এছাড়া তিনি হলফনামায় পারিতোষিক এবং সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী বাবদ আয় দেখিয়েছেন যথাক্রমে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তি
চলতি বছরের ৩০ জুনের হিসাবে শামীম ওসমান তার নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। একই সঙ্গে তার কাছে বৈদেশিক কোনো মুদ্রা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। চলতি বছরের ৩০ জুন অনুযায়ী তার নামে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি হিসেবে ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার বাবদ শামীম ওসমানের নামে রয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ টাকা। পাঁচ বছর পূর্বে এই খাতে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯০ টাকা। তার নামে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি হিসাবে ২ কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার ৬৪৬ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। আগে ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৬ টাকার একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি ছিল তার। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার আরেকটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি।
স্থাবর সম্পদ
কৃষি, অকৃষি, বাড়িসহ শামীম ওসমানের নামে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে এ তালিকায় নারায়ণগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী ফতুল্লার গাবতলী এলাকায় ১০ শতাংশ জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে।
দেনা ও ঋণ
বিদেশি বন্ধু, ব্যাংক, গাড়ির ঋণ ও ক্রসচেকের মাধ্যমে শামীম ওসমানের দায়-দেনার পরিমাণ ২ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা। একই খাতে ৫ বছর পূর্বে তার দেনা ছিল ১ কোটি ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫০ টাকা। এছাড়া যৌথভাবে আইএসআইসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখায় জেডএন শিপিং লাইন্স ও মাইশা এন্টারপ্রাইজের বিপরীতে মোট ২০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে তার। ৫ বছর পূর্বে জেডএন শিপিং লাইন্স, শীতল এসি ট্রান্সপোর্ট ও মাইশা এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৭ টাকা ঋণ ছিল।
স্ত্রী-কন্যার আয় ও সম্পদ
শামীম ওসমান তার ওপর নির্ভরশীল হিসেবে তার স্ত্রী ও কন্যাকে দেখিয়েছেন। তবে তার এক ছেলেও রয়েছে। তাকে নির্ভরশীল হিসেবে দেখানো হয়নি। শামীম ওসমানের স্ত্রী নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপির ব্যবসা ও শেয়ার সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানতের খাতে আয়ের পরিমাণ ৬১ লাখ ১০ হাজার ৯৩৯ টাকা। একই খাতে শামীম ওসমানের কন্যার আয় ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯ টাকা।
জাতীয়