ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও মাঝারি ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও স্কুল খোলা ছিল। কোথাও দেরিতে স্কুল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে হাজির হয়।
তীব্র শীত উপেক্ষা করে স্কুলে গিয়ে তারা আবার বাড়ি ফিরে যায়। তীব্র শীতে হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চুয়াডাঙ্গা : মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৯টায় ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু, বয়স্ক আর ছিন্নমূল মানুষ। পাড়া-মহল্লায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। এ অবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবারও জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জ : মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রা কম থাকায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে শীতকে উপেক্ষা করে নিম্ন-আয়ের মানুষ কাজে বের হচ্ছেন। সদর উপজেলার গুপিরপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিবুল ইসলাম লিটন জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডায় অবস্থা কাহিল। মাঠে কাজে যাওয়া তো দূরে থাক, বাড়ি থেকে বের হওয়াই কঠিন।
পঞ্চগড় : শীতের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তৃতীয় দফা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় জেলার বিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। ভোরে ঘন কুয়াশার আবরণে ঢাকা থাকলেও দুপুরে ঝলমলে রোদ ওঠে। ফলে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসে জনজীবনে। তবে বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত জেঁকে বসে। এতে নিম্ন-আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শিশু ও বয়স্করা চরম বিপাকে পড়ে। কাজে যেতে না পারায় দিনমজুর অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছেন। খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেককে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
কুড়িগ্রাম : আবারও কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরকম তাপমাত্রা আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় টানা চারদিন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বুধবারও বন্ধ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চপর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, রাজশাহীতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর আগে ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।মঙ্গলবার তাপমাত্রা কমে আসার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমকি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। তবে এর আগেই তীব্র শীত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হয়। নির্দেশনা জানার পর শিক্ষকরা তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা জানান। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদান চলেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তাপমাত্রা ওঠানামা করায় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হঠাৎ স্কুল ছুটি দিতে হয়েছে।
টাঙ্গাইল : মঙ্গলবার জেলায় চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া নিম্ন-আয়ের সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুধবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রংপুর : তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় বুধবার পর্যন্ত সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলে পাঠাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদানসূচি ১ ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ১০টায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগের আট জেলায় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে রেকর্ড করা হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজন বিপাকে পড়েছেন।
বরিশাল : মঙ্গলবার সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস রেকর্ড করা হয়। পাশাপাশি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড় কাঁপানো শীতে মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও জেলায় স্কুল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অমান্য করেছে। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এতে ঠান্ডাজনিত রোগে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হোক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, ক্লাস শুরুর সময় সকাল ৯টার পরিবর্তে ১০টায় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে না। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বরিশাল আঞ্চলিক শাখার সভাপতি ও এসসিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীলবরণ হালদার জানান, স্কুল মঙ্গলবার চলেছে। শিক্ষা কার্যালয় থেকে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হয়। দিনের তাপমাত্রা ১০-এর নিচে ছিল না। তাই আমরা স্কুল খোলা রেখেছি।
খুলনা : মঙ্গলবার খুলনায় বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শীতে জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ওপরে না ওঠা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। এদিকে তীব্র শীতে বেড়েছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ। খুলনা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৬০০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে মামুনুর রশীদ বলেন, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। এ সময় শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারেও বিশেষ নজর দিতে হবে। আর কোল্ড ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সমস্যা মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পাবনা : মঙ্গলবার পাবনায় তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় জেলার ১ হাজার ৬৬৪টি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে তাপমাত্রা ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি হওয়ায় সোমবার জেলার সব বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে একটানা হাড় কাঁপানো শীতে পদ্মা-যমুনা নদীর চরাঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। দিনমজুর ও নিম্ন-আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। শীতে কাজ করতে না পারায় তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় তিন শতাধিক শিশু ও বয়স্ক মানুষ ভর্তি হয়েছে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) : মঙ্গলবার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে জনপদ। শীতবস্ত্রের অভাবে কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের চাপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।
লালপুর (নাটোর) : লালপুর উপজেলায় মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উপজেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও শীতের দাপটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিকসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তীব্র শীতে এসব জায়গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জাতীয়