পড়াশোনার দৌড় পঞ্চম শ্রেণি। অথচ নিজেকে পরিচয় দেন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হিসেবে। শুধু তাই নয়, আইন ও মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসাবে পরিচয় দেন বিভিন্ন মহলে। এতসব পরিচয়ের আড়ালে তার মূল কাজ চাঁদাবাজি ও প্রতারণা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে ধরা পড়েছেন ভুয়া সুফি সাগর সামস নামের এ প্রতারক। সোমবার মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, সুফি সাগর বিভিন্ন পর্যায়ের ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্পপতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। তাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভুয়া তথ্য দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করতেন। পরবর্তীতে সেসব অভিযোগ চিঠি আকারে বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠাতেন। চক্রের অন্য সদস্যরা ওইসব চিঠির কপি দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মোটা অংকের চাঁদা দাবি করতেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভুয়া মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে সাংবাদিক সম্মেলন করে অসত্য তথ্য দিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্টসহ হয়রানি করতেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ২৮ মার্চ সাগরের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ পল্টন থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে নির্বাচিত সংসদ-সদস্য মো. আব্দুল ওয়াহেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন সাগর। কিন্তু চাঁদা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটান। এক পর্যায়ে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন ওই সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মাদারীপুরে জন্ম নেওয়া সামসের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র পঞ্চম শ্রেণি। অথচ তিনি নামের সঙ্গে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করেন। ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য রিজেন্টস অব ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাকে সনদ দিয়েছে বলে জানান। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে সে নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ দিতে পারেননি। এমনকি কখনো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেও যাননি। পরে স্বীকার করেন- আমেরিকা প্রবাসী এক ভাই তাকে ‘সম্মানসূচক পিএইচডি’ সনদ সংগ্রহ করে দিয়েছেন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রির ভুয়া সনদ ও বেশকিছু ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
হারুন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ডিবি জানতে পেরেছে, আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন তৈরি করে চাঁদাবাজি করছেন তিনি। সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে চলত চাঁদাবাজি। এ কাজের জন্য বিভিন্ন লোকদের সমন্বয়ে একটি চক্রও পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া তিনি নিজেকে বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টির (বিএইচপি) মহাসচিব হিসাবে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনে এ নামে কোনো দলের নিবন্ধন নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, মানব পাচারের অভিযোগে আমেরিকান দূতাবাসের করা মামলায় সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়্যারম্যান ও মহাসচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই সময় জানা যায়, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া মানবাধিকার সংগঠনটির নাম ব্যবহার ও জাতিসংঘের ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে সাধারণ লোকদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে চাঁদাবাজির মামলায় সামসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জাতীয়