নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে থানা থেকে ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজী ও মারামারিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি যুবলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে বিএনপি সভাপতির শফিকুর রহমান ব্যাটন তালুকদারের ’দেন-দরবার’র খবর চাউর হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (০১ মার্চ, ২০২৫) দুপুরে বিভিন্ন মামলার আসামী পটুয়াখালীর বাউফলের ১৪ নং নওমালা ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক করিম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে বাউফল থানা পুলিশ। খবর শুনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যাটন তালুকদার তার লোকজন নিয়ে থানায় গিয়ে করিমকে ছাড়িয়ে আনতে দেন-দরবার করে। কিন্তু বিধিবাম, খবর শুনে সাংবাদিকরা বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে করিমকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করেন। এক পর্যায়ে ব্যাটন তালুকদার থানা থেকে নিরাশ হয়ে তার সহযোগিদের নিয়ে ফিরে আসে। পরের দিন রবিবার বাউফল থানা করিমে পটুয়াখালী কোর্টে প্রেরণ করে। বর্তমানে করিম হাজতবাসে আছে।
এদিকে, সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) দিবাগত রাতে নগরের হাট বিএনপির ইউনিয়ন কার্যালয়ে ব্যাটনের উপস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফাঁসি চাওয়া পরিবারের সদস্য ফ্যাসিস্ট দোসর স্বপন সরদার বিএনপির নেতা-কর্মি কর্তৃক গণধোলাইর শিকার হন। পরে ব্যাটন তালুকদার তার ত্রাস বাহিনী নিয়ে থানায় গিয়ে নওমালা ইউনিয়ন বিএনপির ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আল আমিন মৃধা, যুবদল নেতা সাইফুল মৃধা এবং বিএনপি কর্মি আঃ ওহাব হাওলাদারকে আসামি করে থানায় মামলা নিতে বাধ্য করেন বলে একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, তিনি এলাকায় ‘আওয়ামী-বিএনপি’ নেতা নামে খ্যাত। বর্তমানে নওমালা ইউনিয়ন বিএনপিতে ব্যাটন তালুকদারকে নিয়ে বিরক্ত নেতাকর্মিরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবদুর রশীদ খান ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সাবেক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ডিগ্রী কঠোয় প্রভাষক পদে ১৭ জন নিয়োগ প্রদান করেন। ব্যাটন সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়ে সাবেক সভাপতি কামাল বিশ্বাসের সহযোগিতায় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে অন্য লোকদের নিয়োগ প্রদান করেন। এক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মোঃ সোহাগ এর নাম বাদ দিয়ে আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামসু ফকিরের মেয়ে নাসিমার নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, কলেজের ডিগ্রি শাখার ৫ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ করে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি আরো ১২ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ২ লাখ করে ২৪ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। এখনো তাদের কাছে আরো টাকা দাবি করছেন এমপিও করে দেওয়ার নামে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কলেজের সভাপতি ব্যাটন তালুকদার ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ আবদুল মালেককে স্বপদে বহাল রাখতে উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেছেন। তবে শিক্ষকদের এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন ব্যাটন বাহিনী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়া যায়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে এ অঞ্চলকে সুন্দর করতে সহযোগিতা করবে। কিন্তু তার উল্টো হয়ে এখন সভাপতির দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানের বদনাম চারদিকে ছড়াচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নামের হাত থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
উপরোক্ত বিষয়ে শফিকুর রহমান ব্যাটন তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বরিশাল, বরিশাল বিভাগ