প্রায় ২৭ বছর নিরুদ্দেশ ছিলেন মো. হাসান। স্ত্রী-সন্তানের মায়ার টানে সম্প্রতি ফিরে আসেন পরিবারে। এ ফিরে আসাটাই তার জন্য হয়ে গেছে কাল। নিজের নামে থাকা সম্পত্তি স্ত্রী-সন্তানের নামে লিখে না দেয়ায় হত্যার পর টুকরো টুকরো করা হয় হাসানের লাশ। পরে প্রমাণ লোপাট করতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় লাশের টুকরো। লাশ টুকরো উদ্ধারের দুই দিনের মধ্যেই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ সময় গ্রেফতার করা হয় নিহতের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। শনিবার এ হত্যাকাণ্ডের কথা গণমাধ্যমে জানায় পিবিআই।
পিবিআই পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর আকমল আলী রোড এলাকার জমির ভিলার ছোট ছেলের বাসায় খুন হন হাসান। লাশের টুকরোর কিছু অংশ ফেলা হয় বোট ক্লাব এলাকায়। অজ্ঞাত হিসেবে লাশ উদ্ধারের পর আঙ্গুলের ছাপ ও সোর্সের মাধ্যমে হাসানের পরিচয় নিশ্চিত হয় পিবিআই। পরে তার ছোট ছেলের বাসার সন্ধান পাই। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, বিশ্লেষন করার পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হই। পরে হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকমল আলী সড়কের একটি খাল থেকে হাসানের শরীরের একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। এখানে মাথা ও শরীরের অনন্যা অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াছ খান বলেন, নিহত হাসান প্রায় ২৭ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীতে হাসানের প্রচুর সম্পত্তি ছিল। এ সম্পত্তিগুলো স্ত্রী সন্তানের নামে লিখে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় স্ত্রী সন্তান মিলে হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন হাসানকে বাসায় ডেকে নেয়া হয়। বাকবিতাণ্ডার এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ট্রলি ব্যাগে করে লাশের ৮ টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। মাথা ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফেলা হয়, যাতে প্রমাণ লোপাট করা যায়। এ ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তানকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক সন্তান ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এরআগে গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে একটি ট্রলিব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। যাতে লাশের ৮টি টুকরো ছিল। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার এসআই আব্দুল কাদির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।