চলতি শুকনো মৌসুমে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে নাব্যতার সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায় ভাটার সময় পানি তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে করে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্যতার সংকট রয়েছে। সেখানে খনন চলছে।
অন্যদিকে নৌপথের বেশ কয়েকটি জায়গা খননের জন্য সম্প্রতি এক সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে তাগিদ দিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশালের পরিদর্শক জুলফিকার আলী বলেন, বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া এমভি সুভরাজ-৯, অ্যাডভেঞ্চার-১ ও সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টাররা অভিযোগ করেছেন, খননের অভাবে ভাটার সময় লঞ্চ চলাচলের জন্য নদীতে ধাক্কাধাক্কি করতে হয়।
এ নিয়ে কথা হলে এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের মাস্টার আলম হোসেন জানান, শুষ্ক মৌসুমের কারণে মেঘনার শাখা এবং গজারিয়া নদীর দুটি জায়গায় প্রায় তিন কিলোমিটার পথে নাব্যতার সংকট দেখা দিয়েছে। এর একটি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বাগরজা থেকে বামনীর চরের গজারিয়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ।
এখানে জোয়ারের সময় নৌযান চলতে পারলেও ভাটায় লঞ্চ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ভাটায় সাধারণত পানির গভীরতা তিন-চার ফুটে নেমে আসে। যদিও লঞ্চ চলাচলে গভীরতা দরকার কমপক্ষে পাঁচ ফুট এবং মালবাহী জাহাজের জন্য সাত ফুট। এ ছাড়া চাঁদপুরের হিজলা থেকে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত মেঘনার শাখায় দুই কিলোমিটার পথে নাব্যতার সংকট দেখা দিয়েছে। এবার খনন না হওয়ায় সেখানে ভাটার সময় চার ফুট গভীর পানি থাকে। এখানে ভাটায় প্রায়ই মালবাহী জাহাজ আটকে যায়। লঞ্চের মাস্টার আলম বলেন, তিনি তাঁর লঞ্চের মালিককে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। লঞ্চের একাধিক মাস্টার জানিয়েছেন, বরিশাল নৌবন্দরেও নাব্যতার সংকট রয়েছে। যদিও সেখানে খনন চলছে। কিন্তু প্রতিবছরই অপরিকল্পিত খননের কারণে ঘাটে লঞ্চ ভেড়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ হোসেন বলেন, খননের আগে তাঁরা মালিক সমিতি বরাবর চিঠি দেন। মালিকেরা খননের জায়গা বললে খনন বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। নতুন করে ওই সব জায়গায় নাব্যতার সংকট হলে খনন বিভাগে চাহিদা পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক বাকের হোসেন বলেন, নতুন করে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও খননের জন্য তিনি খনন বিভাগে চিঠিও দিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে লঞ্চমালিকদের সঙ্গে সভা হয়। সেখানে প্রতিমন্ত্রীকে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে নাব্যতার সংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত খননের তাগিদ দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিকল্পিত খনন না হওয়ায় সরকারের টাকা প্রতিবছর জলে যায়।
বরিশাল