নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে চিকিৎসা নিতে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে হাজির হন নাসরিন বেগম। চিকিৎসকের পরামর্শে একটি এক্স-রে করার প্রয়োজন পড়ে তার।
অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কম টাকায় হাসপাতাল থেকেই এক্স-রে করাতে চান তিনি।
তবে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি বিকল থাকায় সেই এক্স-রে করতে হলো ৩৭ বছরের পুরোনো ও জোড়াতালিতে চলা অ্যানালগ এক্স-রে মেশিন দিয়ে।
নাসরিন বেগম বলেন, এখানে যে এক্স-রে আমি দুইশ টাকার মধ্যে করেছি, তা বাইরে পাঁচশ টাকার নিচে করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করলে ওষুধ কিনে বাড়ি যেতে পারব না। তাই কিছুটা সময় লাগলেও এক্স-রেটা এই সরকারি হাসপাতাল থেকেই করালাম।
এই হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হওয়া একাধিক রোগী জানান, যেখানে সরকারি হাসপাতালে ৭০ থেকে আড়াইশ টাকায় বিভিন্ন ধরনের এক্স-রে সম্ভব, সেখানে বাইরে থেকে করতে লাগে তিনশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
আর এ কারণেই সরকারি হাসপাতালগুলোর এক্স-রে বিভাগে থাকে রোগীদের ভিড়। রোগীদের কথা চিন্তা করে সরকারও ধারাবাহিকভাবে আধুনিক এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করার চেষ্টা করে থাকে হাসপাতালগুলোতে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার সরকারি হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন আছে ৭৬টি। এর মধ্যে ৪১টি কোনোরকমে চললেও অচল হয়ে আছে ৩৫টি মেশিন। আর এক্স-রে মেশিন পরিচালনায় ৭৬ জন রেডিওগ্রাফারের পদে রয়েছেন মাত্র ২১ জন।
আর যে ২১ জন রেডিওগ্রাফার রয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আবার সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সময় দিতে পছন্দ করেন বেশি। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলছেন, মেশিন বিকলের কথা বললেই আমাদের যেতে হয় বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে কম টাকায় এক্স-রে করার সুযোগ আর থাকে না। যদিও বাহিরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক্স-রেসহ যেকোনো পরীক্ষা করালে হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টরের স্টাফ ও চিকিৎসকদের আর্থিক লাভ থাকে।
আর্থিক লাভের বিষয়টি অস্বীকার করে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের রেডিওগ্রাফি বিভাগের স্টাফরা জানান, ২০১৮ সালে পাওয়া ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন মাসেই অচল হয়ে যায়। ৩৭ বছরের পুরনো অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনে কোনোমতে চলছে পরীক্ষার কাজ। গত ২ বছর ধরে রেডিওগ্রাফি কনসালটেন্ট না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পরীক্ষার কাজ। কর্তৃপক্ষকে বার বার এ বিষয়ে জানিয়েও কোনো সমাধান আসেনি।
জামাল হাওলাদার নামে এক রোগী বলেন, এ হাসপাতালের পুরাতন মেশিনে এক্স-রে কার্যক্রম শুরু হলে অস্বাভাবিক ভাইব্রেশন (কম্পন) হয়। বিভাগীয় শহরের এই হাসপাতালের এমন অবস্থা দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাক তারপর এক্স-রে করে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি তা দেখে খুশি হতে পারেননি। তারপরও কোনোভাবে ব্যবস্থাপত্র দেন।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের রেডিওগ্রাফি বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জলিলুর রহমান জানান, নিজের অর্থায়নে মাঝে মাঝে পুরাতন মেশিনটি সারাতে হয় তাকেই। আর এভাবে বর্তমানে কাজ চালানো হলেও এক্স-রে মেশিনটি পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে সার্ভিসটিই বন্ধ হয়ে যাবে হাসপাতালে।
তার দাবি, এক্স-রে মেশিনের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে সেটাই স্বাভাবিক। এই হাসপাতালে মেশিনটি কোনোভাবে চললেও অন্য অনেক জায়গায় তো একেবারেই চলে না।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, মাঝে মাঝে কিছু ঘাটতি থাকে, তবে সেই ঘাটতি পূরণে আমরা বসে থাকি না। পুরো বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে এক্স-রে মেশিন নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
লিড নিউজ বরিশাল, সারাদেশ, স্বাস্থ্য