ছাত্ররাজনীতির পথ ধরে জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠার নজির গড়েছেন বরিশালের অনেক নেতা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন।
জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভাতেও দাপুটে ভূমিকা রেখেছেন বরিশালের অনেকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার মধ্যেও একজন বরিশালের সন্তান- তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
অথচ তার নিজ শহর বরিশাল মহানগরে এক বছরের বেশি সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলছে কমিটি ছাড়াই। গত বছরের ১৫ মে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্তির পর অনেকটা স্থবির হয়ে আছে শক্তিশালী এই ইউনিটের কার্যক্রম। নতুন কমিটি কবে হবে–তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই মহানগরের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। ফলে হতাশা বাড়ছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের।
সাংগঠনিক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোটগ্রহণের আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন মহানগরের তৎকালীন আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না।
এ ঘটনার পর ১৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা আসে কেন্দ্র থেকে। তখন ইনান দাবি করেছিলেন–মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য কমিটি গঠিত হয়েছিল। সংগঠনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী রেজওয়ানুর রহমান নিয়ন বলেন, সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কমিটি দিয়ে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
কেন্দ্রীয় নেতারা আশ্বস্ত করেছেন–দ্রুত কমিটি দেওয়া হবে। আমরাও সেটাই চাই। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমাদের মহানগরের সন্তান। তার ওপর আমাদের আস্থা আছে।
ছাত্রলীগকে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে তুলনা দিয়ে মহানগরের সাবেক সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, ট্রেন থামিয়ে দিলে সেটা কাভার করা কষ্টকর।
কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকলে নেতা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হয়। আমি ছাত্ররাজনীতি করে এসে সদরের ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছি। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত মহানগরের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
প্রায় এক যুগ এক কমিটি
সর্বশেষ বিলুপ্তির আগে মহানগরের আংশিক কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১১ সালে। কমিটিতে মো. জসিমউদ্দিন সভাপতি, অসীম দেওয়ান সাধারণ সম্পাদক এবং তৌসিক আহমেদ রাহাত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১০ বছরেও তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হন। ২০২১ সালের ২৫ মে এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তিন মাসের জন্য করা সেই কমিটি ১১ মাস পর বিলুপ্ত করা হয় গত বছর।
এই ঝুলে থাকার পেছনে গ্রুপিংয়ের রাজনীতিকে দায়ী করেছেন অনেক নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়–দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকা, বক্তা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা এবং সর্বোপরি মেধা। এসব ছাপিয়ে যেখানে গ্রুপিংয়ের প্রাধান্য থাকে সেখানে কে কার অনুসারী–কমিটি দেওয়ার আগে এটি নিয়েও চলে তোড়জোড়।’
নেতারা যা বলছেন
মহানগরে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে তারা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। তাদের কার্যক্রমে কোনো ঘাটতি নেই। নেতারা যার যার ওয়ার্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে নিচ্ছেন। মহানগরে কমিটি না থাকায় কিছুটা তো সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা থেকে বের হওয়ার।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের বাড়িও বরিশালে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, জয়-ইনানের মতো নেতা থাকা সত্ত্বেও মহানগরে ছাত্রলীগ কমিটি শূন্য থাকা দুঃখজনক। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো সিদ্ধান্ত থাকতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে। কমিটি না থাকা দৃষ্টিকটু ও বিব্রতকর বলে মনে করেন তিনি। ইনান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন কমিটি গঠন করা যায়।
বরিশাল, বরিশাল বিভাগ