প্রায় ষাট বছর বয়সী মো. অহিদ। গত ২০ বছর ধরে গাছের সঙ্গে পরম বন্ধুত্ব তার। আবার এই গাছকে ঘিরেই জীবিকা অহিদের। তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সির হাওলা এলাকার আয়ন বাড়ির বাসিন্দা।
অহিদ জানান, গত ২০ বছর আগে বরিশালের স্বরূপকাঠি থেকে গাছের চারা কিনে নিজ বাড়ির আঙিনায় ১২০ শতাংশ জমিতে নার্সারি শুরু করি। যার নাম রাখি ‘লিয়া নার্সারি’। এ নার্সারিতে গাছের চারা লাগানোর পর থেকে এগুলোকে পরম যত্নে নিয়মিত পরিচর্যা করি। এর ৮ মাসের মাথায় ওইসব চারা বিক্রি করি। বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস চারা বিক্রির মৌসুম। এ সময় প্রতি মাসে অন্তত আড়াই লাখ টাকার চারা বিক্রি করা সম্ভব হয়। যেখান থেকে মূল পুঁজি, শ্রমিক এবং পরিবহন খরচ বাদে প্রতি মাসে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।
তিনি আরও জানান, আমার নার্সারিতে এখন আমড়া লেবু, লেচু, মাল্টা, কমলা, আম, সুপারি, নারিকেল, কাঠ ও রেইনট্রিসহ পঞ্চাশেরও অধিক জাতের গাছের চারা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা মূল্যের চারা রয়েছে। এসব চারা বিভিন্ন সময় লালমোহন ও পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করি। এছাড়া অনেক সময় নার্সারিতে পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যান।
অহিদ জানান, মৌসুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় তেমন চারা বিক্রি হয় না। তবুও প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো গাছের চারা বিক্রি হয়। যেখান থেকে খরচ বাদে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। এ দিয়েই চলে সংসার। বর্তমানে সংসারে দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। এক মেয়ে থাকলেও তাকে এই নার্সারির আয়ের টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এছাড়া এই নার্সারির চারা বিক্রি করে ছেলেদের পড়াচ্ছি। সব মিলিয়ে এই নার্সারির আয় দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আলহামদুল্লিলাহ ভালো আছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু হাসনাইন বলেন, নার্সারি মালিকদের সঠিক পদ্ধতিতে গাছের চারা উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে হর্টিকালচার সেন্টার রয়েছে। যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নার্সারি মালিকরা সঠিকভাবে গাছের চারা উৎপাদন করতে পারছেন। এছাড়া নার্সারিতে গাছের চারা উৎপাদন করে অধিক লাভবানও হতে পারছেন মালিকরা। যা উপজেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির আঙিনাতেই নার্সারি করা যায়। যাতে খরচও কম। আর লাভবান হওয়া যায় কয়েক গুণ। এ জন্য নতুন করে কেউ যদি নার্সারি করতে আগ্রহী হয় তাহলে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হবে। যাতে করে নতুন কৃষি উদ্যেক্তারা যেন নার্সারিতে সফল হতে পারেন।’
বরিশাল বিভাগ, ভোলা