বেতাগী প্রতিনিধি : বেতাগী পৌর শহরে সাপ্তাহিক হাটের দিনে সুপারি বেচা-কেনা করা হয়। ছবিটি বেতাগী পৌর শহরের বাজার থেকে তোলা। উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়। তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সুপারির বাজারদর কম থাকায় হতাশ বেতাগীর কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও বাগানে প্রায় আট হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর এসব বাগানের সব গাছেই সুপারির ভালো ফলন ধরেছে। এতে এ বছর ১০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারিগাছে ফুল আসে। সেই ফুল থেকে সুপারি হয়। যা ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পুরোপুরি পেকে যায়। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাজারে সুপারি আসতে শুরু করেছে। মূলত আশ্বিন ও কার্তিক মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। এখন উপজেলার প্রতিটা বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিক্রির জন্য সুপারি আসছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানিভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
কৃষক কৃষ্ণকান্ত ঘরামী বলেন, বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী সুপারির দাম কম। এ বছরের তুলনায় গত বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে দাম ভালো ছিল।
কিন্তু এ বছর গত এক সপ্তাহ থেকেই কম দামে বিক্রি করছেন চাষি, গৃহস্থ ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে সুপারি বিক্রির প্রধান বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেতাগী পৌর শহরের বাজার, ঝোপখালী বাজার, পুটিয়াখালী, রানীপুর, গড়িয়াবুনিয়া, বিবিচিনি, লক্ষ্মীপুরা, দেশান্তরকাঠী, বাসণ্ডা পুলেরহাট, হোসনাবাদ, জলিশা, মোকামিয়া, সোনার বাংলা, কাজির হাট, বলইবুনিয়া, কাউনিয়া, চান্দখালী, মিরেরহাট, কুমড়াখালী, ভোড়া কালিকাবাড়ি, সড়িষামুড়িসহ উপজেলার ৪০টির বেশি বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে সুপারি কেনা-বেচার জমজমাট ব্যবসা।
এসব বাজার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিনে পাইকারি ও আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে তাদের চাহিদামতো স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সুপারি কিনে নিচ্ছেন। এসব বাজারে এ বছর এক কুড়ি (২১০টি) সুপারি ১৫০ টাকা, মানভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের চেয়ে ৭৫ থেকে ১০০ টাকা কম।
বেতাগী পৌরসভার বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভূদেব সমাদ্দার বলেন, এ বছর সুপারির ভালো ফলন হলেও গত বছরের তুলনায় বাজারে দাম কম। অপর ব্যবসায়ী ষাটোর্ধ্ব সবুজ মৃধা বলেন, এই উপজেলায় প্রায় আট হেক্টর জমির সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর বিভিন্ন গৃহস্থ বাগানবাড়িতে সুপারির বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম কম থাকায় হতাশ বিক্রেতারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ টন সুপারি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি হবে। বাজারে কাঁচা-পাকা সুপারির দাম না থাকায় গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন। তবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে চাষি ও গৃহস্থরা দাম বেশি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বরগুনা, বরিশাল বিভাগ