নিজস্ব প্রতিবেদক ::: মাসের পর মাস কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পথ্য বিভাগের কর্মচারী (বাবুর্চি) জিয়াউল হক বাপ্পির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা হওয়ার দাপটে কর্মস্থলে প্রভাব বিস্তার করে দায়িত্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।
সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে দুই দফা ধরাও পড়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। এ নিয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শোকজ করা হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। শাস্তির নামে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বদলিতেই সীমাবদ্ধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করেও মাসের পর মাস বাপ্পি হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি বেতন-ভাতা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের সাধারণ কর্মচারীরা।
জানা গেছে, ‘২০১৬ সালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিতর্কিত নিয়োগ কার্যক্রমের সময় পথ্য বিভাগে বাবুর্চি পদে নিয়োগ পান জিয়াউল হক বাপ্পি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ চাকরিতে যোগদানের পর কিছুদিন কর্মস্থলে আসা যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পালন করেননি মূল দায়িত্ব। এমনকি বছর খানেক যেতেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত হয়ে পড়েন এই কর্মচারী।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘বাপ্পি কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলেও মাস শেষে হাজিরা দিয়ে বেতন-ভাতা তুলে নিয়েছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন পথ্য বিভাগের ডায়েটিশিয়ান জাকির হোসেন মোল্লা ও স্টুয়ার্ড একেএম জসিম উদ্দিন। বিনিময়ে তার কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করেন পথ্য বিভাগের ওই দুই কর্মকর্তা। তবে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও মাস শেষে হাজিরা দিয়ে বেতন-ভাতা গ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে চলতি বছরের জুলাই মাসে। বাবুর্চি জিয়াউল হক বাপ্পি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্যেও তাকে পুর্নমাসের উপস্থিত দেখিয়ে বেতন-ভাতা উত্তলনের অনৈতিক সুযোগ দেয়ার অপরাধে ১৫ জুলাই ডায়েটেশিয়ান জাকির হোসেন মোল্লা ও স্টুয়ার্ড একেএম জসিম উদ্দিনকে কৈফিয়ত তলব করেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম (যার স্মারক নং- শেবামেকহা/বরি/২০২৩/৩২৬১।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘পরবর্তী সময় দুইজন কর্মকর্তা দায়সারাভাবে শোকজের জবাদ দিয়ে এড়িয়ে যান। পাশাপাশি অভিযুক্ত বাবুর্চি জিয়াউল হক বাপ্পিকে পথ্য বিভাগে বাবুর্চির কাজ থেকে সরিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন স্টোরে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু সেখানেও অনিয়মিত হয়ে পড়েন বাপ্পি। আগের মতই ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যান। আর উপস্থিত হলেও হাজিরা খাতায় সাক্ষার আর হাসপাতালে সেলফি তুলে চমপট দেন।
সম্প্রতি দায়িত্বে ফাঁকিবাজির সেই কৌশলও ধরা পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। যে কারণে সবশেষ গত ১৪ অক্টোবর বাপ্পিকে দায়িত্ব দেয়া হয় মেডিসিন ভবনের কাউন্টারে। কিন্তু সেখানেও দায়িত্ব পালনের নামে সেলফি তুলে তিনি কেটে পড়ছেন বলে অভিযোগ তার সহকর্মীদের।
কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, ‘জিয়াউল হক বাপ্পি একজন মাদকাসক্ত। তিনি হাসপাতালের মধ্যেই ইয়াবা সেবনের আকড়া তৈরি করেছেন। সম্প্রতি একটি কক্ষে তার ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও এসেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের হাতে। তবে ভিডিওটি হাসপাতালের অভ্যন্তরের কী-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হাসপাতালের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘বাবুর্চি পদটি ‘ব্লক পোস্ট’। যেখান থেকে অন্য পদে বা দায়িত্বে বদলি এবং পদোন্নতির সুযোগ নেই। কিন্তু দায়িত্ব পালনে তার ফাঁকিবাজির অপরাধে শাস্তি না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোর পুলিশ খেলায় ক্ষুব্ধ সাধারণ কর্মচারীরা। তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পথ্য বিভাগের বাবুর্জি জিয়াউল হক বাপ্পি।
পথ্য বিভাগের ডায়েটিশিয়ান জাকির হোসেন মোল্লা ঘটনার কিছুটা সত্যতা শিকার করে বলেন, ‘বাপ্পি অনুপস্থিত থাকতো না এটা ঠিক না। সে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হতো। তবে সে দায়িত্ব পালন করতো না। এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক আমাদের কৈফিয়ত তলব করেছিল। আমরা লিখিতভাবে এর জবাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউল হক বাপ্পি চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়ন বরিশাল জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ইউনিয়নের নেতা হওয়ার দাপটে সে সরকারি দায়িত্ব এড়িয়ে চলতো। এ অপরাধে গত কদিন হলো তাকে পথ্য বিভাগ থেকে সরিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের নিচতলায় প্যাথালজি বিভাগের কাউন্টারে দায়িত্ব দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রশ্নের উত্তর শুনে তিনি বলেন, ‘আমি অপারেশন থিয়েটারে আছি। পাঁচ মিনিট পর ফোন করুন। তবে পরবর্তীতে তার বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বরিশাল