পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায়শই ঘটছে আচরনবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ। এক প্রার্থী অপর প্রার্থীকে দুষছেন নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার জন্য।
এ আসনে প্রধান দুই মেরুর দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঈগল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়াল (সাইদুর রহমান) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পালটাপালটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়ালের ভাই মুজিবুর রহমান খালেকের ছেলে তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে ৩শ অস্ত্রধারী ক্যাডার সদর উপজেলার কদমতলা বাজার ও শিকদার মল্লিক ইউনিয়নে থাকা তার নৌকা মার্কার কার্যালয় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে এবং একই দিন পৌর শহরের আলামকাঠী এলাকায় নৌকার নির্বাচনি অফিস ও এক সমর্থকের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়াসহ পৌর শহরে থাকা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহামুদ সজলের অফিস ও বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
একই দিন নৌকা মার্কার কর্মী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলুর বাড়িতে হামলা ও গুলি করা এবং নৌকার সমর্থক জেলার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম বায়েজিদ হোসেনের বোনের শহরের বাসায় হামলা ও শহরে অস্ত্র মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এছাড়া নৌকার কর্মী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ডা. সিদ্ধার্থ মজুমদারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার অভিযোগ করেন। নৌকা মার্কার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ডিআইজিকে অবহিত করেছেন। তিনি পিরোজপুরবাসীর জান-মাল ও নিরাপত্তা এবং তার সমর্থক কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অপরদিকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ের এ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রার্থী একেএমএ আউয়াল।
ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ প্রদান করায় তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তক্রমে এবং পিরোজপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগ ও জনগণের দাবি ও ইচ্ছাপূরণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ঈগল মার্কা নিয়ে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন।
একেএমএ আউয়াল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়ী হন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম দল ও নেতাকর্মী থেকে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় নিশ্চিত পরাজয় জেনে তার মাদক সন্ত্রাসী বাহিনী এবং অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দিয়ে পিরোজপুর-১ আসনকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তফশিল ঘোষণার পরদিন থেকেই এ আসনে অস্ত্রের মহড়া দিতে শুরু করে, যা জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
৯ ডিসেম্বর শ ম রেজাউল করিমের ভাই নজরুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নে একেএমএ আউয়ালের কর্মী সুজিত সিকদার, সহ-সভাপতি নাজিরপুর ছাত্রলীগ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের আহত করে এবং সভাস্থল ভাঙচুর করে। ১০ ডিসেম্বর রেজাউল করিমের ভাই নূরে আলম শাহীনের নেতৃত্বে শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নে কালিবাড়ি নামক স্থানে আমার কর্মিসভায় নেতাকর্মীদের আহত করে এবং সভাস্থল ভাঙচুর করে। ১৭ ডিসেম্বর রেজাউল করিমের সন্ত্রাসী কর্মীদের নেতৃত্বে শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নে (বেকারির মোড়) স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীদের জীবননাশের হুমকি প্রদান করে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশত্যাগের ভয় দেখায়। একই সঙ্গে ১৭ ডিসেম্বর তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান এসএম বায়েজিদ হোসেনের নেতৃত্বে আমার (স্বতন্ত্র প্রার্থীর) কর্মী সমর্থকরা শিকদার মল্লিক ইউনিয়ন থেকে ফেরার পথে কদমতলা ব্রিজের ওপর জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর মুজিব অভি এবং রনি দাসকে কুপিয়ে জখম করে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আরও জানান, পিরোজপুর পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শ ম রেজাউল করিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের ঘটনা দেখেছেন। এ অবস্থায় পিরোজপুর জেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত আছে। ঈগল মার্কার সমর্থক ও কর্মীদের জীবন বিপন্নের পথে।
বরিশাল বিভাগ