সন্নিকটে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সভা-সমাবেশ কিংবা মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা। আর বিএনপি প্রচারণা না নামলেও তলে তলে প্রার্থী ঠিক করে ফেলছে দলটি। তারাও দিবেন একক প্রার্থী। এমন বক্তব্য তৃর্নমূল নেতাকর্মীদের। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে। তাদের দাবী মানলেই ঘোষণা হবে প্রার্থীর নাম।
একটি পৌরসভা ও দুটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে বরিশাল-১ আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৩০ জন। এ আসনটিতে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৫টি। জাতীয় সংসদে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রীপরিষদের রয়েছে এ আসনের গৌরবময় ইতিহাস।
স্বাধীনতার পরে এ আসনটিতে আওয়ামীলীগ ছয়বার, বিএনপি তিনবার এবং জাতীয় পার্টি দুইবার নির্বাচিত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আসনকে বলা হয় আওয়ামীলীগের দূর্গ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ এ আসনের প্রথম সংসদস্য সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির মোশাররফ হোসেন শাজাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম এ আনস থেকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সুনীল কুমার গুপ্ত নির্বাচিত হন। তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে এ আসন (তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৩) দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোনজামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্য যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম। আব্দুররব সেরনিয়াবাতের জেষ্ঠ্যপুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আপন ফুফাতো ভাই। এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নির্বাচন হন। এছাড়া তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির প্রনেতা এবং মন্ত্রী পদমর্যাদার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপনকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে জহির উদ্দিন স্বপন পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৩০৫ ভোট।
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, স্থানীয় ও সংসদীয় কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। তাকে বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। তাই বরিশাল-১ আসনে তার বিকল্প কোন প্রার্থী নেই আওয়ামীলীগে। তিনিই আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী।
বিএনপির একাধিক নেতা এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন-এ আসনের বিএনপির দলীয় সাবেক সাংসদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীণ রয়েছেন। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এছাড়া বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য এ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী সেরনিয়াবাত ও কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম রহমান পারভেজ প্রার্থী হতে পারেন। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হবেন দলের আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ রাসেল সরদার মেহেদী হাসান।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই সাধারন মানুষ আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের পক্ষে নৌকা মার্কায় পূর্ণরায় ভোট দেবেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয় এটা সাধারণ মানুষ এখন বুঝে গেছেন। বরিশাল-১ আসনে নৌকার একক প্রার্থী থাকবেন জননেতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।’
বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে যদি নির্বাচন হয়। তাহলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আর বরিশাল-১ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী থাকবেন মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। মনোনয়ন চাইবেন অনেকে আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে জহির উদ্দিন স্বপন’।
একই বক্তব্য বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুলের। তিনি বলেন, ‘বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া তিনি দলীয় নেতাকর্মীদেরও পছন্দনীয় ব্যক্তি। জহির উদ্দিন স্বপন-ই পাবেন দলীয় মনোনয়ন।
লিড নিউজ বরিশাল বিভাগ, হোম