মাদক ব্যবসায়ীদের হুমকিতে খুলে ফেলা হলো বরিশাালের জাগুয়া ইউনিয়নের চন্দ্রিপুর মোহাম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরা। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভিতরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা স্কুলে অভয়ারণ্য বানাতেই এ অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
গত মঙ্গলবার সকালে চন্দ্রিপুর এলাকা গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় মাদকের ব্যবসা ও মেয়েদের বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করে আসছে স্থানীয় রমিজ হাওলাদার ও তার সহযোগিরা। তাই স্কুল ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নিজ অর্থায়নে স্কুলের চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেন সমাজ সেবক মাসুদ পারভেজ বাপ্পি। আর এতে মাদক ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হওয়ায় বাপ্পিকে ক্যামেরা খুলে নেওয়ার হুমকি দেয় রমিজ ও তার সহযোগিরা। ফলে বাধ্য হয়ে গত শুক্রবার বিদ্যালয় থেকে তিনি স্কুলের সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে যান।
স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রমিজের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধে কিছু বললেই হামলার মুখোমুখি হতে হয়।
চন্দ্রিপুর মোহাম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সমাজ সেবক মাসুদ পারভেজ বাপ্পী বিদ্যালয়ের চারপাশে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেন। পরবর্তী এই ক্যামেরা কি কারণে খুলে নেয়া হয়েছে, তা আমি বলতে পারবো না। এ ক্ষেত্রে তিনি খুব দু:খ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় বেলায়েত হোসেন সরদার নামে এক বাসিন্দা বলেন, কয়েকমাস আগে স্কুলের লাইব্রেরিতে চুরি সংগঠিত হয়েছে। এছাড়া বহিরাগত যুবকরা এসে এখানে আড্ডা দিয়ে স্কুলগামী মেয়েদের ইভটিজিং করে। এসকল ঘটনার কারণে স্থানীয় জামাই (মাসুদ পারভেজ বাপ্পী) নিজ উদ্যোগে স্কুলে ক্যামেরা লাগিয়ে দেয়।
এই ক্যামেরার কারণে স্থানীয় রমিজ হাওলাদার ও তার দলবলের অপরাধ করতে সমস্যা হওয়ার কারণে ক্যামেরা খুলে নিতে বাপ্পীকে চাপ সৃষ্টি করে। তাই বাপ্পী গত শুক্রবার ক্যামেরা খুলে নিয়েছে। এখন প্রকাশ্য আবার অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে রমিজ ও তার বাহিনী।
নাম প্রকাশ শর্তে আরেক বাসিন্ধা বলেন, রমিজ, আসাদুলসহ ১০-১২ জনের একটি বাহিনী রাত দিন বহিরাগত ও স্থানীয় যুবকদের কাছে এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে। এ কারণে এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে গেছে। স্কুলে সিসি ক্যামেরার কারণে প্রকাশ্য এই অপরাধকর্মকাণ্ড করতে না পেরে ক্যামেরা খুলে নিতে বাপ্পীকে চাপ সৃষ্টি করে রমিজ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
সমাজ সেবক মাসুদ পারভেজ বাপ্পী বলেন, আমি বিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় রমিজ ও তার লোকজন এসে আমাকে ক্যামেরা খুলে নিতে বলে, না নিলে ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি ক্যামেরা খুলে নিয়েছি।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জাগুয়া ইউনিয়নের চন্দ্রীপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, গত শুক্রবার স্কুলের সামনে এসে স্কুলের সিসি ক্যামেরা খোলার জন্য রমিজ হাওলাদারকে হুমকি দিয়েছেন। তাই মাসুদ পারভেজ বাপ্পী ক্যামেরা খুলে নিয়েছে। ক্যামেরা এখন না থাকায় স্কুলগামী মেয়েরা এখন আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের মুঠোফোনেেফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়ায় জানা সম্ভব হয়নি।
চন্দ্রিপুর মোহাম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফিরোজ হোসেন বলেন, আমি শহরে আছি। এই বিষয়ে আপনার সাথে পরে কথা বলবো।
জাগুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন জানান, রমিজ হাওলাদার স্থানীয়ভাবে চিহিৃত অপরাধী। তাদের হামলার স্বীকার আমিও হয়েছি।
এ বিষয়ে জাগুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেদায়েত উল্লাহ খান আজাদীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক বলেন, বিয়টি আমার জানা নেই। সরেজমিনে পুলিশ পাঠিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিড নিউজ বরিশাল, শিক্ষা