তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। চলতি মাসের শুরুতেই সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করেছে ২৫ হাজার ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। একই দিনে কলমানি মার্কেট থেকে ধার করেছে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি উপকরণের আওতায় আরও ৩০০ কোটি টাকা ধার করেছে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে। সব মিলে এদিন ব্যাংকগুলো ২৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা ধার করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উপকরণের আওতায় অন্য ব্যাংক থেকে ধার করেছে ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কলমানি মার্কেট থেকে নিয়েছে ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। বাকি ৮২৩ কোটি টাকা নিয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধারের আওতায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের চাহিদা বেড়েছে। বাড়তি ব্যয় মেটাতে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এছাড়া বৈদেশিক দায় শোধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গিয়ে নগদ টাকা আটকে যাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে বেশি, কিন্তু আমানত বেড়েছে কম। বিতরণ করা ঋণ থেকেও অর্থ আদায় হচ্ছে কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে জুলাইয়ে তারল্য ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকায়। গত ৭ মাসে তারল্য কমেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বাড়ছিল।
এদিকে বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করেছে ২৮ হাজার ৮৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা একদিনে সর্বোচ্চ ধার হিসাবে চিহ্নিত। কলমানিসহ এদিন মোট ধারের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধার নেয়। সোমবার ধার করেছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজেদের কাছে মোট তারল্যের একটি অংশ নগদ আকারে থাকার কথা। কিন্তু অনেক ব্যাংকই এটি রাখতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলো এখন ধার করেই চলছে। কলমানি ও মার্কেট থেকে ধার করা নিয়মিত ব্যাপার হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার ও অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার স্বাভাবিক ঘটনা নয়। অথচ ব্যাংকগুলো এখন এ ধারের ওপর ভর করেই চলছে।
অর্থনীতি