লোকসভা নির্বাচনে জিতে মোদি রেকর্ড টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তবে এই প্রথম তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার গঠনের জন্য আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থনের প্রয়োজন হচ্ছে। তাই শরিকদের হাজারও দাবিদাওয়া মেনে তৈরি করতে হবে মোদির তৃতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভা।আগের দুই মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বিজেপি এবার লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে মাত্র ২৪০ আসন পেয়েছে। সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসন প্রয়োজন। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩ আসন জিতেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ২৩২ আসনে জিতেছে, এর মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯ আসন।আগামীকাল রোববার সন্ধ্যায় একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই হবেন প্রথম তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।এদিকে মোদি চাপে পড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দাবি তুলে বিজেপিকে চাপে রাখছে এনডিএর অন্যান্য শরিক। তাদের শর্ত মেনে বিলিবণ্টনে কি এবার বাংলার ভাগ্যে ছিঁড়বে পূর্ণ মন্ত্রিত্বের শিকে? এই প্রশ্নেই এখন সরগরম বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহল। দিল্লিতেও এ নিয়ে জোর আলোচনা। তবে এখনই খোলসা করে কেউ কিছু বলছেন না।যে চারটি জোটের সমর্থন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ; তারা হলেন— এন চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি, যারা ১৬ আসন জিতেছে, নীতীশ কুমারের জেডিইউ (১২), একনাথ শিন্ডের শিবসেনা (৭) এবং চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি-রাম বিলাস (৫)।
এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপি পশ্চিমবাংলায় জিতেছে ১২টি আসন। উনিশে যা ছিল ১৮। সেই সময় দু-চারজন সাংসদ ঘুরেফিরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। আসানসোল থেকে জয়ী বাবুল সুপ্রিয়, আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা, বাঁকুড়ার সুভাষ সরকারের পর কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক ও বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে পূর্ণমন্ত্রিত্ব জোটেনি কারও কপালে।এবার তো জয়ের হার আরও কম। তবে কি মোদির তৃতীয় মন্ত্রিসভায় আদৌ কারও জায়গা হবে? জয়ী বিজেপি প্রার্থীরাও এ বিষয়ে ঘোর সংশয়ে। দিল্লির রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, পূর্ণমন্ত্রী নয়, তবে সর্বোচ্চ তিন-চারজনের ঠাঁই হতে পারে মোদির ক্যাবিনেটে। সে তালিকায় থাকছে তমলুকের জয়ী প্রার্থী ও সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ারের মনোজ টিগ্গা, রানাঘাটের জগন্নাথ সরকার, বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর। রয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ’ সৌমিত্র খাঁর নামও। এদের মধ্যে শান্তনু ঠাকুর আগেরবার জাহাজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।ভুল প্রার্থী বাছাই, ভোটের সাম্প্রদায়িকীকরণ, আতঙ্ক এবং নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভে সবস্তরের কর্মীদের না নামা, বিদায়ী সাংসদদের নিজেদের এলাকায় পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে রাজ্যে ভরাডুবির পেছনে প্রাথমিক ময়নাতদন্তে এই ধরনের নানা কারণ উঠে আসছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। শুক্রবার ছিল এনডিএর নেতা বাছাইয়ের বৈঠক। তাই দলের নির্দেশে প্রত্যেক সাংসদ উপস্থিত হয়েছিলেন দিল্লিতে। সেখানেই বঙ্গ বিজেপির এক সাংসদ ও রাজ্যস্তরের অন্যতম শীর্ষনেতার প্রাথমিক বিশ্লেষণে উঠে আসে এ ধরনের নানা তত্ত্ব। তার মতে, যদিও প্রার্থী নির্বাচন করেছিল সর্বভারতীয় নেতৃত্ব, তবু প্রার্থী বাছাইয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আরও ভেবেচিন্তে নেওয়া যেত। একই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে, অযোধ্যা, রাজস্থানের মতো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও যে হিন্দুরা সর্বত্রভাবে সমর্থন করেনি, সেই একই ছবি দেখা গেছে রাজ্যেও।উলটোদিকে, সংখ্যালঘুরা দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন তৃণমূলকে। এছাড়াও রাজ্য বিজেপির দাবি, নিচু তলার কর্মীদের একটা বড় অংশ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নীরব ছিলেন। কারও ক্ষেত্রে কাজ করেছে তৃণমূলের আতঙ্ক, কেউ বা আবার আদি-নব্য ও তৎকাল নেতৃত্বের ক্ষোভে কাজ করেননি। আবার বেশ কয়েকজন সাংসদ নিজেদের এলাকায় পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার ফলেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিয়েছে তৃণমূল। নিজেদের ব্যর্থতার পাশাপাশি আরও একটি যে কারণকে পরাজয়ের কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি, তা হলো ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। যদিও এখনো এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বঙ্গ বিজেপি। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের অর্থনীতির যা হাল, তাতে এই হাজার টাকাই অনেক সংসার চালানোর জন্য বিশাল ব্যাপার। তার ওপর আবার একসঙ্গে তিন মাসের টাকা পেয়ে যাওয়ায় এবং তৃণমূল ক্ষমতায় না এলে এই রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে, সেই আশঙ্কাতেই তৃণমূলের পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছে বঙ্গ নেতৃত্ব।
আন্তর্জাতিক, হোম

					
					
                                                                
                                                                
                                                                
                                                                
                                                                
                                                                
            