বরগুনার আমতলীতে ভেঙে যাওয়া সেতুতে সবধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এটি ছিল হালকা যান (ফুটওভারব্রিজ) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত সেতু। অথচ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করত পণ্যবাহী ভারি টমটম ও টাফি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন।
বরগুনার আমতলী উপজেলার পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নের নাম হলদিয়া এবং চওড়া। শনিবার দুপুরে এ দুই ইউনিয়নের সংযোগ সেতুটি ধসে পড়ে একটি মাইক্রোবাস ও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৯ জনের।
এমনই ঝুঁকিপূর্ণ ২৫টিরও অধিক সেতু রয়েছে আশপাশের গ্রামাঞ্চলে। ঝুঁকি নিয়েই যেখানে পারাপার করেন হাজারও মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে হালকাযান (ফুটওভারব্রিজ) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর ৪-৫ বছরের মাথায়ই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে। সেতুর নির্মাণ এবং এরপর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও গত ১৬ বছরে একবারের জন্যও সংস্কার করা হয়নি। তবে ঝুঁকি এড়াতে সেতুর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানানোর পাশাপাশি যান চলাচল রোধে সেতুতে ওঠার মুখে গাছ পুঁতে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিন্তু বিভিন্ন গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে পুঁতে রাখা গাছ গোপনে তুলে ফেলেন চালকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এছাড়া নির্মাণের পর গত ১৬ বছরে একবারের জন্যও সংস্কার করা হয়নি সেতুটি। এ কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেতুতে যান চলাচল রোধে পুঁতে দেওয়া গাছের গুঁড়ি উপরে ফেলেন টমটম ও টাফি নামে পরিচিত অবৈধ যানবাহনের চালকরা। এসব যানবাহনে ভারি পণ্য পরিবহণের কারণে সেতুটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়। এ ঘটনায় সেতু নির্মাণে অনিয়ম এবং দায়িত্বে অবহেলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক, এ সেতুটি ২০১৯ সাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমি ২০২১ সালে নির্বাচিত হবার পরে কয়েকবার গাছ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিলাম; কিন্তু কিছু অসাধু লোক তা উপড়ে ফেলে আবার চলাচল করতেন। আমি উপজেলার সমন্বয় সভায় এই সেতুসহ আমার ইউনিয়নের আরও ২৫টি সেতুর বিষয়ে অনেকবার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামী ৫ মাসের মধ্যে যদি এগুলো সংস্কার করা না হয় তবে আমার ইউনিয়নের সঙ্গে আমতলী উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে এলজিইডির আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই এলাকা লবণাক্ত হওয়ায় সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত স্টিল স্ট্রাকচারে মরিচা ধরেছে। আমরা আগেই এ সেতুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সেতুর উভয় দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ও প্রবেশ মুখে গাছ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু মাহিন্দ্র গাড়ি বা অন্য ভারি যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে রাতের আঁধারে কে বা কারা তা সরিয়ে ফেলেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
সেতু ভেঙে নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে- সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে সেতুর ওখানে সাইনবোর্ডসহ যান চলাচল বন্ধ করতে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। তবে রাতের আঁধারে কে বা কারা সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত আমরা এটুকু জানতে পরেছি।
বরগুনা, বরিশাল বিভাগ, হোম