নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নার ওপর গুলি বর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম মর্তুজা আবেদীনকে আটক করা হয়েছে। তবে রইজ আহমেদ মান্নার ওপর গুলি বর্ষণের চেষ্টা ও মর্তুজাকে আটকের বিষয়টি নাটকীয় বলে দাবী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। এ ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও দুটি দেখে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মর্তুজা আবেদীনকে নাটকীয়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে নানা মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর পোর্ট রোডে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কাউন্সিলর মর্তুজা আবেদীনের হাতে পিস্তল ধরা অবস্থায় তাকে মান্না ও তার লোকজন জাপটে ধরে আছেন। এ সময় মান্নাকে বলতে শোনা যায়, আমাকে গুলি করতে পিস্তল বের করছে। ওর হাত থেকে পিস্তল নেন। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়র জনতা তার হাত থেকে পিস্তল নিয়ে গেলে মর্তুজাকে বলতে শোনা যায়, এটা আমার লাইসেন্স করা পিস্তল।
অপর ভিডিওতে দেখা যায়- নগরীর পোর্ট রোড এলাকার জোনাল ভূমি অফিসের সামনে নেতাকর্মীদের নিয়ে দাড়িয়ে থাকেতে দেখ যায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নাকে। এ সময় ভূমি অফিস থেকে বের হন সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মর্তুজা আবেদীন। বের হয়ে একটি অটোরিক্সায় ওঠেন। এ সময় মান্না এগিয়ে গিয়ে মর্তুজাকে বলেন- তুই বেয়াদবি করলি ক্যা, এই তুই বেয়াদবি করলি ক্যা। তখন মর্তুজা বলেন- কি বেয়াদবি করছি, এলাকার ছোট ভাই হিসেবে ভাইর পোলা হিসেবে বলতে পারিনা। এরপর মান্না বলেন- কোন ধো,,, ভাইর পোলা, তুই আমার বউ বাচ্চাকে মারছো, আমি তোর কিসের ভাইর পোলা। মর্তুজাকে বলতে শোনা যায়- আমি তোর বউ বাচ্চাকে মারিনি। পরে মান্না বলেন- তুই নিজে মারছো। তখন মর্তুজা বলেন- তুই কি এখন আমাকে মারবি? মারলে মার। এ সময় বলেন- আমি কইছি ওরে মারমু।
একটু পরেই মান্না তেরে গিয়ে মর্তুজাকে বলতে থাকেন- কান মইল্লা দিমু, কান মইল্লা দিমু তোর। মর্তুজা বলতে থাকেন- পারলে মার, মারতো। এরপর মান্না কয়েকটা ধাক্কা মারে এবং চর থাপ্পর মেরে মর্তুজাকে জাপটে ধরেন। পরে সাথে থাকা নেতাকর্মীরাও তাকে জাপটে ধরেন। এরপর বাকি সময় টুকু ধস্তাধস্তির শব্দ শোনা যায়। পরে অস্ত্র বের করছে বলে হাকডাক দেন মান্না। পরে মান্না বলে ওঠেন- খা….র পোলা তুই আমারে গুলি মারতে চাইছো আমি তোরে ধরছি। মর্তুজাকে বলতে শোনা যায়, এটা আমার লাইসেন্স করা পিস্তল, এটা আমার সাথে থাকে। এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম মর্তুজা আবেদীনকে হেফাজতে নেয় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও দুটি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায় কাউন্সিলর গোলাম মর্তুজা আবেদীনকে নাটকীয়ভাবে ফাঁসাতে শ্রমিক লীগ নেতা রইজ আহমেদ মান্না নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। এ ঘটনায় উল্টো রইজ আহমেদ মান্না ফেঁসে যেতে পারেন বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন ও নেটিজেনরা। কাউন্সিলর একেএম মর্তুজা আবেদীন বলেন, আমার ওপর হামলা হতে পারে সেটা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম আগে থেকেই। কেননা বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে ফলো করছিল ওরা। ভূমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর পরই আমার ওপর হামলা চালায় মান্নার লোকজন। এ সময় আমার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মান্না।
রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, আমি পারিবারিক জমির কাজে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে যাই। কাজ শেষে বের হয়ে গেটে আসা মাত্র মর্তুজা আবেদীন আমাকে গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে হঠাৎ পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়। ঘটনার সময়ে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর শফিক আহমেদ বলেন, ভূমি অফিস থেকে অস্ত্র হাতে মুরতজাসহ দুইজন দৌড়ে এসে একটি হলুদ অটোর মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ সময় কিছু লোকজন অস্ত্রসহ মুরতজাকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ অস্ত্র ও কাউন্সিলরকে হেফাজতে নেয়। স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পৌঁছানোর আগেই কাউন্সিলরের ওপর হামলা করা হয়। পরে আমরা তাকে হেফাজতে নেওয়ার পরও উত্তেজনা থামেনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, অস্ত্রটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাছাড়া কাউন্সিলর সাহেবও থানায় রয়েছেন। আমরা বিষয়টা দেখছি। আশে পাশের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আসলে কী ঘটেছিল বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মর্তুজা আবেদীনের অভিযোগের কারণে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা হারান রইজ আহম্মেদ মান্না।
কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে এই দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মীদের মারধর ও অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ায় ১৩ জনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রইজ আহমেদ মান্না।
লিড নিউজ বরিশাল