বরিশালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আর সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যে দিয়েও দিনের পর দিন বেড়েই চলছে মাদকের বিস্তার।নিত্য নতুন অসাধু কৌশলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক এনে নির্দিস্ট এলাকাভিত্তিক সরবরাহে কাজ করছে কারবারিরা। বরিশালে বেড়েই চলেছে মাদকসেবীর সংখ্যা।পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল,গাঁজা, হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্য। ধরাও পড়ছে মাদক কারবারিরা। তবে আড়ালে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা।যার ফলে কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। আর মাদকের এই থাবায় জড়িয়ে পড়ছে তরুন প্রজন্ম। সরবরাহকৃত মাদক বেশিরভাগই তুলে দেয়া হচ্ছে এই নতুন প্রজন্মের হাতে।ফলে মদাকের এই ভয়াল নেশায় নতুন প্রজন্ম দিনে দিনে অপরাধের দিকে ঝুকছে। সংগঠিত হচ্ছে লোমহর্ষক নানান অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন সংঘটিত অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক।এছাড়া ছিনতাই, চুরি, পাড়া-মহল্লায় উঠতি বয়সী তরুণদের মধ্যে মারামারি, খুনাখুনির পেছনে রয়েছে মাদকের জের। মাদকাসক্তির কারণে হচ্ছে খুনাখুনিও।ঘটছে মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও। এমনকি মাদকের নেশায় বখে যাওয়া তরুণরা টাকার জন্য বাবা-মাকেও রক্তাক্ত করছে।
একদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর অবস্থানে থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে দিনরাত কাজ করলেও মাদক কারবারিরা নিত্য নয়া কৌশলে মাদক বিস্তারে নানা পন্থা অবলম্বন করেই যাচ্ছে । গত এক সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক অধিদপ্তরের পৃথক অভিযানে পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় মোট ৫৩৯ বোতল ফেনসিডিল ও ৩ হাজার চারশত পিচ ইয়াবা ২ কেজি গাজা উদ্ধার করা হয়েছে।
জানাযায়,বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয় অভিযানে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪ টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পটুয়াখালী শহরের বড় চৌরাস্তার ফুট ওভার ব্রিজের কাছে পায়রা রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ২ হাজার চারশো পঞ্চাশ পিচ ইয়াবা সহ একজনকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তি হলেন, পটুয়াখালী জেলার বিঘাই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মো: হারুন মৃধার পুত্র মো: মহসিন মৃধা(২৩)।আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানাযায়।
এছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বটতলা এলাকায় মাদক বহনকারী একটি প্রাইভেট কার আটক করে ৪৯৪ পিস ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।এসময় আসামীদের ধাওয়া করতে গিয়ে পুলিশ বহনকারী গাড়িটি খাদে পড়ে গিয়ে দুইজন পুলিশ কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা ফেনসিডিল ভর্তি প্রাইভেটকারটি বটতলা বাজারে রেখে পালিয়ে যায়।পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
অন্যদিকে গত বুধবার পটুয়াখালী জেলা (গোয়েন্দা) ডিবি পুলিশের অভিযানে পয়তাল্লিশ বোতল ফেনসিডিল সহ দুইজনকে আটক করা হয়। আটকৃতরা হলেন, পটুয়াখালী পৌরসভার ০৭নং ওয়ার্ড সিএন্ডবি অফিস এলাকার বাসিন্দা মৃত সফেজ খাঁ ছেলে মোঃ কালাম খাঁ(৩০) ও একই এলাকার ফজলে আলী মুন্সী’র ছেলে মোঃ আবুল বাশার(৪৫)।
পটুয়াখালী জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ, একে এম আজমল হুদা বলেন,গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৪৫ বোতল ফেনসিডিল সহ দুইজনকে আটক করা হয়। আসমীদের বিরুদ্ধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার রাতে বরিশাল কাউনিয়া থানার মাদক বিরোধী অভিযানে ২০০ পিচ ইয়াবা সহ দুইজনকে আটক করা হয়।কাউনিয়া থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মোঃ এনামুল হক বলেন,ভাটিখানা জোর মসজিদ এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালীন ভাটিখানা সোনিয়া মসজিদ গলির বাসিন্দা মোহাম্মদ লিটন হাওলাদার পুত্র মোঃ তানভীর হাওলাদার নবীন (২৫) ও একই এলাকার মোঃ কাদের মোল্লার পুত্র মোঃ রাকিব মোল্লা(২৫)কে ২০০ পিচ ইয়াবা সহ আটক করা হয়।তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় বরিশাল নগরীর নথল্লাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনে অভিযান চালিয়ে ৮০০ পিস ইয়াবাসহ কক্সবাজারের মহেশখালীর সাতঘর এলাকার ওমর ফারুককে (৪১) আটক করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ।একই দিনে বিএমপি বন্দর থানা পুলিশ গভীর রাতে সদর উপজেলার টুঙ্গীবাডিয়া ইউনিয়নের নরকাটি লাহারহাটের মহসিন মার্কেটের সামনে অভিযান চালিয়ে দুই কেজি গাঁজাসহ কামাল বেপারি (৩০) নামে একজনকে আটক করে।
তামাক বিরোধী সংগঠন দি অডেশাস্ এর সভাপতি সাঈদ পান্থ বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক মাদক বরিশালে ঢুকছে বলে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযান থেকে জানতে পেরেছি । আমাদের ধারণা আইনশৃংখলা বাহিনী ৫০ ভাগ মাদক ধরতে পারছে, বাকি ৫০ ভাগ মাদক গোটা বরিশালে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যা নতুন প্রজন্মকে বিপদগামী করছে।’ আমরা দি অডেশাস বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক বিরোধী কর্মকান্ড করছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সাবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, মাদক নির্মূলে আমরা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মাদকগুলো আগে থেকে জব্দ করতে পারায় সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে না।
আমরা যেসব অভিযান চালিয়েছি সবগুলোকে সফল হয়েছি। মাদক নির্মূলে এধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।