ভোট গ্রহণের দিন যত এগিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার মাঠ ততোই সরগরম হয়ে উঠছে। কমতি নেই বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের আওতাধীন ৪২ উপজেলায়।
যদিও বরিশাল সদর আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসসহ কিছু প্রার্থী এখনও প্রচারণার মাঠে নামেননি। কিছু প্রার্থী কোনো রকমন প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বরিশালের ২১টি আসনে মোট ১২০ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই করছেন। সর্বোচ্চ ১৮টি আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল ও ১৭ টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি আসনে ‘রিল্যাক্সে’ আছেন নৌকার প্রার্থীরা। এ অঞ্চলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১৭টি দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জেপি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে, জাকের পার্টি, গণ ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির একজন করে প্রার্থী রয়েছে।
জয়ের বিষয়ে সব প্রার্থীই আশাবাদী। তবে মাঠ পর্যায়ের হিসাব অনুযায়ী, ৯টি আসনে আওয়ামী লীগের জয় সুনিশ্চিত। যে কারণেই এসব নৌকার প্রার্থীরা রিল্যাক্সে আছেন, বলছে জনগণ। তবে আটটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বে নৌকা। তাই এসব আসনকে লক্ষ্য রেখে প্রার্থিতা বেশ সতর্ক রয়েছেন।
বাকি চারটি আসনের দুটিতে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নৌকা ব্যতীত একটি আসনে জাতীয় পার্টিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে।
জানা গেছে, যেসব আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রয়েছে নৌকা, সেসব আসনগুলোয় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক ও সমমনারাও স্বতন্ত্রদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যে আসনগুলোয় নৌকা সহজে জয় পাবে, সেসব আসনে নৌকার বিপরীতে জনপ্রিয় বা পরিচিত কোনো মুখ নেই। ফলে নৌকার এসব প্রার্থী নিজ নিজ আসন নিয়ে রিল্যাক্স করছেন।
কারা আছেন রিল্যাক্সে-
নিজ আসনে জয় নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করছেন না বরগুনা-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সবুরের স্ত্রী সুলতানা নাদিরা, পটুয়াখালী-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, ভোলা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম, ভোলা-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী, ভোলা-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বরিশাল-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, ঝালকাঠি-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু।
এ ছাড়া নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বরিশাল-৪ বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, পিরোজপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তুম আলী ফরাজী এবং পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলা চলে।
হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনামূলক অপরিচিত, নতুন প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা গড়ে তোলা কষ্টকর বলে মনে করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। তিনি বলেন, নতুনরা কতটুকু বা কি করবে, সেটি দেখার বিষয়। বরিশালে একেবারে নতুন কিছু ঘটে যাবে, সেটি হবে না- তা অনেকটাই নিশ্চিত।
যারা আছেন সতর্ক
নিজ নিজ আসন নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছেন শম্ভু, শাহজাদার মতো প্রার্থীরা। জানা গেছে, বরগুনা-১ আসনে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে আরও ৯ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তবে এরমধ্যে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুর সাথে তার ভোটযুদ্ধ হতে পারে সবচেয়ে বেশি।
পটুয়াখালী-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এস.এম. শাহজাদা। প্রতিদ্বন্দ্বী বাকী ৫ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন। ফলে এ আসনে সহজেই জয় হচ্ছে না শাহজাদার।
পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান। প্রতিদ্বন্দ্বী বাকী ৫ প্রার্থীর মধ্যে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের কারণে বিজয়ের মুকুট কার কাছে যাবে তা ফলাফলের আগে বলা অসম্ভব।
পিরোজপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। প্রতিদ্বন্দ্বী বাকী ৩ প্রার্থীর মধ্যে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য একে এম এ আউয়াল (সাইদুর রহমান)।
পিরোজপুর-২ আসনেও আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত অবস্থান মোকাবিলা করতে হচ্ছে জোটের নৌকার প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন মহারাজ ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
বরিশাল-২ আসনে জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ইতোমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেরে বাংলার দৌহিত্র ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এ.কে ফাইয়াজুল হকের সাথে ভোটযুদ্ধ করতে হবে তার। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীকে সঙ্গীত শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসও ভালো ভোটে বাগাতে পারেন।
বরিশাল-৩ আসনে আসনে চতুর্মুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে গোলাম কিবরিয়া টিপু, ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে টিপু সুলতান, স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান এবং ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মধ্যে ভোটের লড়াই হতে পারে।
বরিশাল-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মাঠের বাইরে থাকলেও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন কম তাতিয়ে তোলেননি প্রচারণার মাঠ।
বরিশাল-৬ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাফিজ মল্লিক। যার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম চুন্নু। আবার এই আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনাসহ আরও ৮ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও রয়েছে।
বরিশাল