বরিশালে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই নগরীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে গড়ে প্রায় শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে।রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল গুলো।আর এই ডেঙ্গুর অজুহাতে বরিশালের সকল বাজারেই লাগামহীন হারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি ফলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ফলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে নগরীর হাসপাতাল গুলোর সামনে থাকা ফলের দোকান গুলোতে বেশি দাম হাঁকাচ্ছে বলে দেখা যায়।
নিত্যপণ্যের বাজার আগে থেকেই চড়া।আর এখন নগরীর সকল বাজারে ফলের দাম বৃদ্ধির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ফলের দাম। যার কারণে মানুষ দাম শুনে ফল না কিনেই চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকেই ফল খাওয়া ছেড়েছেন, আর কিনলেও কমিয়েছেন পরিমাণ।আবার বিশেষ প্রয়োজনে যারা কেনেন তারাও অল্প পরিমাণে কিনছেন।
চিকিৎসরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় ফল খাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিলেও ফল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে এখন বহু মানুষ।অনেকে বলছেন,ফল কেনা এখন বিলাসিতার আরেক নাম।আর এই উর্ধগতি দামের ফলে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ফলে বিক্রেতার এটাকে পূঁজি করে নিয়েছে।এমন চিত্রই দেখা যায় নগরীর শের-ই-বাংলা হাসপাতালে সামনে।পাঁচ টাকা কমেও ফল বিক্রি করতে নারাজ বিক্রেতারা ।ফলে দূরদূরন্তর থেকে আসা রোগীর পড়ছে চরম বিপাকে।হাসপাতালের প্রবেশ মুখে ডাবের দাম যেন আকাশচুম্বী।৮০-১০০ টাকায় যে ডাব পাওয়ার কথা তা এখন ১৫০-২০০ টাকা।শুধু ডাব নয় হাসপাতালের সামনে ফলের দাম যেন আগুনের গোলা হাতই দেয়া যায় না।
হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে হেপাটাইটিস বি পজেটিভ নিয়ে গত ৬ দিন ধরে ভর্তি রয়েছে সুজন। প্রতিদিন সে একটি ডাব খায়।গত ৬ দিনে তার ডাব খেতে খরচ হয় ১৩০০ টাকা।তিনি বলেন আমি স্বরূপকাঠি থাকি অনেক ডাব কেনা বেচা দেখি।কিন্তু এখানে তো দেখছি মানুষের গলা কাটছে এই বিক্রেতারা।
বরগুনা থেকে দাদার চিকিৎসা করাতে আসা কাশেম জানান,এখানকার ফল ব্যবসায়ীরা আমাদের জিম্মি করে টাকা নিচ্ছে।কারন তারা জানে আমরা দূর থেকে এসেছি দাম যতই হোক রুগীর জন্য ফল কিনতেই হবে।আসলে আমরা অসহয়া এদের কাছে।বরিশালে জেনারেল হাসপাতালে উল্টো পাশে ডাব বিক্রি করেন আলম মিয়া।তিনি বলেন, আগের থেকে ডাবের দাম অনেক বেশি।আমরা ছোট খুচরা ব্যবসায়ী।আমরা ১০-১৫ টাকা লাভ করি।
জেলখানার মোড়ে ভ্যানের ডাব বিক্রেতা শুক্কুর আলি বলেন,কিছুদিন ধরে বেশিদামে ডাব কিনতে হচ্ছে।সারাদিন রোদে দারিয়ে ডাব বিক্রি করি ৩০/৩৫ টা।আর প্রাতিটা ডাবে লাভ করি ১০-২০ টাকা।এইটুকু যদি লাভ না করি তাহলে সংসার চালাবো কিভাবে।এদিকে নগররী নাজির পোল সদর হাসপাতালে পাশে হওয়ায় এখানকার ফল বিক্রেতারাও বেশ চড়া দামেই ফলে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু ভ্যানে নানা রকম ফল বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীরা।এখানকার এক ফল বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানাযায়,আপেল ৩৮০ টাকা,আঙ্গুর ৪০০ টাকা,বেদানা ৪৫০,কমলা ৩৮০ টাকা ও মাল্টা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি করছে।বরিশাল নগরী বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় হাসপাতাল গুলার সামনে ও তার আশপাশের ফলের দোকান গুলোতেই দাম তুলনামূলক বেশি।
নগরীর ফলপট্টি ঘুরে দেখা যায়,কমলা ৩০০ টাকা,আনার ৩২০ টাকা,লালা আঙ্গুর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাসার জন্য ফল কিনতে আসা মাহাবুব আলম বলেন,যে হারে দাম বাড়ছে মনে হচ্ছে ফলের বাজারে আগুন লেগেছে।তিনি বলেন পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি কেনার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে হচ্ছেনা।আগে যেখানে ১কেজি কিনতাম এখন সেখানে আধাঁ কেজি কিনি।কারন মাসে একবার হলেও পরিবারকে ফল খাওয়াতে না পারলে দুঃখ থেকে যায়।নগরীর চরকাউয়া খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়,২৬০-৩২০ টাকা,মাল্টা ৩২০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ টাকা, কমলা ৩০০ টাকা,আনার ৩২০ টাকা ও লাল আঙ্গুর ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খেয়াঘাটের এক ফল ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়,মাল্টার দাম বেশ কিছুদিন আগে থেকে বেড়েছে। আপেলের দাম কিছুদিন আগে একটু কম ছিল, এখন আবার বেড়ে গেছে। আঙুর ও বেদানা অনেকদিন ধরে এই দামেই বিক্রি করছি।তিনি বলেন সব ফলের দামই বাড়তি।আমরা বেশি দামে কিনি সামন্য লাভে বিক্রি করি।পোর্টরোডের এক ব্যবসায়ী বলেন,এখন তুলনামূলক একটু দাম বেশি। আরত দিয়ে আমরা যে দামে কিনি তার থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করি।হাসপাতালের সামনে বাড়তি দামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে তারা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে।ডেঙ্গু রুগী বাড়ায় তারা মানুষের পকেট কাটছে।কতৃপক্ষের ওখানে দৃষ্টি দেয়া উচিত। আর ডেঙ্গুের কারণে অস্বাভাবিকভাবে ডাবের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বরিশাল’র সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন,ডাব ও ফলের বাজার খুবই চড়া।দাম অসহনীয় হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।বাজারে আরো কঠোর মনিটরিং দরকার।এদিক সারাদেশে ডাবের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে নেমেছে।গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইসলামিয়া হাসপাতালের সামনে পাঁচজন ডাব ব্যবসায়ীকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করছেন।কিন্তু তাতেও থেমে নেই এই অসাধু ব্যবসায়ীরা।জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, আমরা শেবাচিম হাসপাতালে সামনে অভিযান করে দেখতে পাই ৮০-১০০ টাকার ডাব ১৮০-২০০ টাকা নিচ্ছে।এজন্য তাদের জরিমানা করা হয়।এছাড়া সাধারণ ক্রেতা ও ডেঙ্গু রোগীদের কথা মাথায় রেখে আমরা ফলের দোকাগুলেতেও অভিযান করছি।তিনি আরো বলেন যতদিন এই বাজার স্বাভাবিক না হবে জনস্বার্থে আমাদের বাজার তদারকিমূলক অভিযান অব্যাহত থাকবে।অযথা কেউ মূল্য বৃদ্ধি করবে তা হবে না।ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন কোন ঘটনা ঘটলে প্রমানসহ লিখিত অভিযোগে অবগত করুন বা ১৬১২১ নম্বরে যোগাযোগ করুন।অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
অন্যদিকে বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের মধ্যে হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে।তারা বলেন অচিরেই দাম সহনীয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে।এ পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে ক্রেতারা।
বরিশালে ডেঙ্গুর অজুহাতে ফলের দাম চড়া! বরিশাল