নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে সুবিধা না দিয়ে কোনো অবস্থাতেই ভোলার গ্যাস ঢাকার শিল্পাঞ্চলে নিতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটি। তারা বলেন, যেকোনো মূল্যে ভোলাতে গ্যাস নিতে আসা কোনো গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। ভোলার গ্যাস দিয়ে আগে ভোলার মানুষসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে ভোলা থেকে গ্যাস নেওয়া প্রতিহত করা হবে বলে জানান সংগঠনটির নেতারা।
এ উপলক্ষে তারা ভোলায় ঘরে ঘরে গ্যাস, ইপিজেড, বিশেষ শিল্পাঞ্চল, ইন্ট্রাকোর সাথে গ্যাস বিক্রি চুক্তি বাতিল, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে ভোলার গ্যাস ব্যবহার এবং ভোলায় মেডিক্যাল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করেছেন।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। প্রথম দিনে প্রায় ৮০০ মানুষ এ সকল দাবিতে গণস্বাক্ষর করেছেন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন সংগঠনটি। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ইন্ট্রাকো কম্পানির সাথে গ্যাস বিক্রি চুক্তি বাতিলের দাবিতে ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে এ সংগঠনটি।
ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটির ভোলা শাখার সদস্য সচিব এস এম বাহাউদ্দিন জানান, ভোলায় প্রাকৃতি গ্যাসে ভরপুর থাকার পরও ভোলার মানুষ এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘ দিন ধরে ভোলার মানুষ আবাসিক গ্যাস সংযোগের দাবিতে আন্দোলন করছে। এতে করে কর্তৃপক্ষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ইন্ট্রাকো নামের একটি কম্পানির সাথে বিএনজি করে ভোলা থেকে গ্যাস নেওয়ার চুক্তি করেছে। এটি ভোলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সাতে প্রতারণার সামিল। এতো বলা হয়েছে ভোলা-বরিশাল সেতু করে তারাপর ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেওয়া হবে। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন না করেই হঠাৎ করে এ চুক্তি করা ভোলার মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া কিছুই না।
ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী জানান, বরিশাল বাংলাদেশের অনুন্নত বিভাগগুলির মধ্যে একটি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, খানাভিত্তিক দারিদ্র্যের হারের দিক থেকে বরিশালের অবস্থান সবার শীর্ষে।
শিল্পায়ন না হওয়া, শিল্পায়নের জন্য রেল যোগাযোগ বা গ্যাস সংযোগ না থাকাসহ নানাবিধ কারণে বরিশাল বিভাগের এই দশা। ভোলার গ্যাস দিয়ে বরিশালসহ অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন দীর্ঘদিনের দাবি। এই গ্যাস দিয়ে বরিশাল ও ভোলার কলকারখানায় এবং আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সর্বশেষ ২০১৮ সালেও প্রধানমন্ত্রী বরিশালে এক সমাবেশে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে ভোলার গ্যাস বিএনজি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবারহ করার লক্ষে চলতি বছরের গত ২১ মে ইন্ট্রাকো কম্পানির সাথে সরকারের ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়েছে।
ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে ভোলায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হচ্ছে। অথচ ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা না করে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এমনকি ভোলার আবাসিক খাত এখন পর্যন্ত এই গ্যাসের সংযোগ পায়নি। এ চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে।
গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মোবাশ্বের উল্ল্যাহ চৌধুরী, দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক আলহাজ মু. শওকাত হোসেন, নাগরিক আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম বাহাউদ্দিন, সদস্য আবু তাহের, শফিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান পিংকু, অ্যাডভোকেট জাবেদ ইকবালসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের ভোলা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের দিকে সর্বপ্রথম ভোলায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। ভোলায় বর্তমানে দুই হাজার ৩৪০টি ঘরে আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এরপর সারা দেশে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় জ্বালানি বিভাগ। এরপর থেকে আবাসিক খাতে আর কোনো সংযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য ভোলায় তিন হাজারেরও অধিক আবেদন জমা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি ঘরের সামনে রাইজার বসানো হয়েছে এবং ৭১২টি চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সুন্দর বন গ্যাস কম্পানির মাধ্যমে ঘরে ঘরে গ্যাস দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে ৪০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন বসিয়েছে। ২০১৩ সালে দুই হাজার ৩৫০টি পরিবারকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরো ২০০ পরিবারকে সংযোগ দেওয়ার জন্য ঘরের সামনে রাইজার স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো চার হাজার পরিবারের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।
বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ নামের আলাদা দুটি গ্যাসক্ষেত্রে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়। এসব কূপে মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ টিসিএফ ঘনফুট। গত ২২ মে ভোলার ইলিশা-১ নামের কূপটিকে দেশের ২৯তম গ্যাস কূপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৯৪-৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে। এরপর থেকেই একের পর এক গ্যাস কূপের সন্ধান পাওয়া যায়। যা বর্তমানে ৯টি কূপে এসে দাঁড়িয়েছে।
ভোলা